'অ্যান্টি প্রোপাগান্ডা ফোর্স' খুলেছে ছাত্রলীগের কয়েক নেতা

এক শ্রেণির ব্যক্তিদের ‘সুশীল’ নামে আখ্যায়িত করে সামাজিক মাধ্যমে তাদেরে ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের অভিযোগ, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডে এ সব ‘সুশীল’ সরব ছিলেন, তবে নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিষয়ে তারা নীরব থাকেন।

এ দিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর অনলাইনে ‘গুজব’ ঠেকাতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ চ্যাটও খুলেছেন তাঁরা। গ্রুপটির নাম ‘অ্যান্টি প্রোপাগান্ডা ফোর্স’। ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী কোনো প্রচারণা দেখলেই সেখানে ‘অভিযান’ চালাচ্ছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

‘গুজব’ ঠেকাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যে গ্রুপটি খুলেছেন, তাতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান তুষার, আরিফ হোসেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমানসহ অনেকে। তাঁদের দুজন ফেসবুকে এ সংক্রান্ত গ্রুপ খোলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে ‘দিবস দাস’ নামে চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার একটি রক্তাক্ত ছবি আপলোড করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। ছবির ক্যাপশনে ক্ষুব্ধ সনজিত লিখেছেন, ‘দিবস দাসের ওপর ছাত্রদল-শিবিরের ন্যক্কারজনক এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের কঠোর শাস্তি চাই। এখন কেউ বিচার চায় না কেন?’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই সুশীল সমাজের প্রাদুর্ভাবের মাঝে হামলাটা যখন ছাত্রলীগের উপর হবে তখন তা ভাইরাল হবে না।’

সনজিত চন্দ্র দাসের পোস্টটি কপি করে ছবিসহ নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরে-আলম আশিক, আরিফ হোসেন, মাহমুদুল হাসান তুষার, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলামসহ অনেকে। দিবস দাসের ওপর হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরাও। সিলেটে শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতেও তাঁদের অনেকে ফেসবুকে সরব।

দিবস দাসকে নিয়ে পোস্ট দেওয়া কয়েকজনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা দিবসের পুরো পরিচয় অথবা কবে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন সেটা জানাতে পারেননি। তবে অন্য এক নেতা বলেন, দিবস চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী। তার ওপর কবে হামলা হয়েছিল সেটা তিনি এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না।

কয়েক মাস আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা না পেয়ে মাসব্যাপী আন্দোলন করা সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন রিফাতও ‘সুশীল’দের ওপর বেশ ক্ষুব্ধ। ফেসবুকে নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট দিয়ে সেই ক্ষোভের কথা জানান দিয়েছেন তাঁরা।

ওই ছাত্রলীগ নেতাদের ভাষ্য, ‘অনলাইনে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সংঘবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই লিখে বেড়াচ্ছে। তাঁরা যা লেখে, সেটার বেশিরভাগই গুজব ও মিথ্যা। এদের ঠেকাতেই দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে গ্রুপটি খোলা হয়েছে।’

‘সুশীল’ বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান তুষার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী আছে, যাঁদের দৃশ্যত কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। এসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগ সরকার ও ছাত্রলীগ-বিরোধী কোনো ইস্যু পেলে হামলে পড়ে। কিন্তু যেসব অন্যায়কাজের সঙ্গে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না, সেগুলো নিয়ে তাঁরা কোনো প্রতিবাদও জানায় না, কথাও বলে না। এরাই সুশীল।’