'ফেরার' লুৎফর রহমান যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত

বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি লুৎফর রহমান ওরফে ‘লুৎফর ডাকাত’কে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন এবং সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে লুৎফর রহমানকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।

পুলিশের নথিতে লুৎফর রহমান ‘ফেরার’। কিন্তু যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নৌ ডাকাতি, গরু লুট, খুন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েও দুর্গম চরে বিলাসী জীবনযাপনের অভিযোগও আছে লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে।

লুৎফর রহমানের বাড়ি সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর দুর্গম বহুলাডাঙা চরে। লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যমুনা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নৌ ডাকাতি, গরু লুট, খুন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। অস্ত্র, ডাকাতিসহ ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পুলিশের নথিতে ‘পলাতক’ লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে যমুনার দুর্গম চরে বিলাসী জীবনযাপনের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তোলার তথ্য পেয়ে লুৎফর রহমানকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

পুলিশ সূত্র জানায়, লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাইবান্ধার সাঘাটা, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, জামালপুরের মাদরগঞ্জ ও ইসলামপুর এবং সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানায় ডাকাতি, লুট, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, খুন, মাদক কারবারির প্রায় দুই ডজন মামলা রয়েছে।

সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, লুৎফরের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। সোনাতলা, নীলফামারীসহ একাধিক স্থানে বাসা-বাড়ি করে পলাতক থাকার কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান ওসি।

যমুনার দুর্গম চর বহুলাডাঙ্গা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ জানায়, প্রায় দুই যুগ ধরে যমুনা নদীর দুর্গম চরে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম যুবলীগ নেতা লুৎফর রহমান। যমুনা নদীপথে যাত্রী ও গরুবাহী নৌ ডাকাতি, চরের বাথান থেকে গরু লুট, চর দখল, চাঁদাবাজি, খুন, মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর পরিচালনাসহ নানা অপরাধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বহুলাডাঙ্গা চরের অবস্থান বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাইবান্ধার সাঘাটা, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর থানার সীমান্তবর্তী এলাকায়। দুর্গম এলাকায় পুলিশের অভিযান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্গম চরে আস্তানাগড়ে লুৎফর রহমান বিলাসী জীবন যাপন করছেন। সম্প্রতি বহুলাডাঙ্গা চরে গিয়ে দেখা গেছে, চরের টিনের ঘেরাবাড়িতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণযন্ত্র লাগানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ডিশ–সংযোগ, রয়েছে সিসিটিভি, সৌরবিদ্যুৎ।

বহুলাডাঙ্গা চরের বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুগ আগে বিএনপি করলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদের হাত ধরে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির পদ পান।

লুৎফর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ।