আর্চারি শিখলেন ২৭ বিদেশিও

প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আর্চাররা। ১২ অক্টোবর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে।  প্রথম আলো
প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আর্চাররা। ১২ অক্টোবর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে। প্রথম আলো

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবি শহরের বাসিন্দা আলিয়া আল আহমেদ (১৮)। ছোটবেলায় টিভিতে নিয়মিত ‘রবিনহুড’ কার্টুন দেখতেন তিনি। রবিনহুডকে দেখে তিরন্দাজ হওয়ার শখ জাগে তাঁর। যোগ দেন আরব আমিরাতের একটি আর্চারি ক্লাবে। কিন্তু ক্লাবে নতুন কিছু শিখতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে খোঁজ পেয়ে যান বাংলাদেশের আর্চারি কর্মশালার বিষয়ে। দেরি না করে চলে আসেন এ দেশে।

সৌদি আরবের মেয়ে হাইফা আল খিনিজানও (২৫) আসেন একইভাবে। তিনি একজন ঘোড়সওয়ার। দুই বছর আগে যোগ দিয়েছিলেন সৌদির একটি আর্চারি ক্লাবে। কিন্তু আরবের রক্ষণশীল সমাজে আর্চারি শেখার আগ্রহে ভাটা পড়ে তাঁর। তাই ক্লাব কোচের কাছে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের খবর পেয়েই চলে আসেন প্রশিক্ষণ নিতে। প্রকৃত আর্চার হতে দরকার মনোবল ও প্রকৃত শিক্ষা—এই দুই মন্ত্রকে ধারণ করেই বাংলাদেশে আসেন তিনি।

শুধু আলিয়া আল আহমেদ, হাইফা আল খিনিজান নন, তাঁদের মতো অনেক বিদেশি আর্চারির ওপর প্রশিক্ষণ নিতে ৬ অক্টোবর আসেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের আয়োজনে গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড এশিয়ান আর্চারির যৌথ কর্মশালা। পাঁচ দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ছয় বাংলাদেশিসহ অংশ নেন আটটি দেশের ৩৩ জন আর্চার। তাঁদের প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন জার্মান কোচ ফ্রেডরিক মার্টিন।

প্রশিক্ষণ চলাকালে আলিয়া আল আহমেদ বলেন, শুরুতে আর্চারির বিষয়ে তাঁর পরিবারের সম্মতি ছিল না। প্রশিক্ষণ নিতে দেশের বাইরে (বাংলাদেশে) আসাটাও ছিল অকল্পনীয়। তবে তাঁর আগ্রহের কাছে হার মেনেছে সব। আলিয়া বলেন, ‘পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও আমার আগ্রহের কারণে অনুমতি দিয়ে দেয়। এখানে এসে অনেক কিছইু শিখতে পেরেছি।’ আর হাইফা আল খিনজিন বলেন, ‘আরবে আর্চারিতে মানুষের আগ্রহ কম। ভালো কোচের অভাবে আর্চারির প্রকৃত শিক্ষাটা পাওয়া যায় না। তবে এখানকার কোচ অনেক ভালো।’

যৌথ কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী ৩৩ জন আর্চারের মধ্যে পুরুষ ১৬ জন, নারী আর্চার ১৭ জন। বাংলাদেশি ছাড়াও এঁদের মধ্যে রয়েছেন জর্ডান, নেপাল, পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, ইউএইর আর্চার। প্রশিক্ষণ শেষে ১২ অক্টোবর আর্চারদের মেডেল ও সনদ দেওয়া হয়।

আর্চার ও কোচদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কোনো দেশে আর্চারি জনপ্রিয় খেলা। আবার কোনো কোনো দেশে এখনো তেমন জনপ্রিয়তা পাইনি। তবে দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

কথা হলে ইউএইর নারী কোচ আমিরা মুহাম্মদ নাদর আবদেল গাওয়েদ বাসিউনি সিমরি বলেন, ‘মেয়েরা হাফপ্যান্ট, ছোট জামা পরুক—এটা আরবের কোনো মুসলিম পরিবার চায় না। তাই বেশির ভাগ পরিবারই মেয়েদের খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করে। এ কারণে প্রথম অবস্থায় আর্চারিতে কেউ আসতে চাইত না। কিন্তু এটা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।’

প্রশিক্ষণে বিদেশি আর্চারদের সঙ্গে পেয়ে বাংলাদেশি আর্চারেরাও আনন্দিত। উম্যাচিং মারমার কথায় ফুটে ওঠে আনন্দের ছাপ। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকেই মাঠে একসঙ্গে অনুশীলন করেছি। একে অপরের ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনা করায় নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’

কোচ ফ্রেডরিক মার্টিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌথ কর্মশালার একটি বড় সুবিধা হলো এখানে বিভিন্ন দেশের আর্চাররা অংশ নেয়। ফলে তারা একে অপরের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পায়, আর আমরাও বুঝতে পারি তাদের ভুলত্রুটিগুলো। এখানে অনেকেই ছিল একেবারেই নতুন। তবে তারা আগ্রহী হওয়ায় সহজেই তাদের ভুলগুলো সংশোধন করা সম্ভব হয়েছে।’

ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা প্রত্যেকেই এ ধরনের কর্মশালার প্রতি খুব আগ্রহী। কোচ হিসেবে মার্টিনকে পেয়েও তাঁরা ছিল খুব আনন্দিত।’

স্থানীয় সাংসদ ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আর্চাররা বাংলাদেশে আসছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের। আমরাও চেষ্টা করেছি তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে।’