৫ জেলার সড়কে ঝরল ৯ প্রাণ

সড়ক দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনা

দেশের পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ও আজ শনিবার ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, সিলেট, বরিশাল ও হবিগঞ্জ জেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নয়জনের মধ্যে পাঁচ নারী ও এক শিশু আছে।

ঝিনাইদহের লাউদিয়ায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে আজ সকালে চলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় মাহেন্দ্রর দুই নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় মাহেন্দ্রর যাত্রীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহত দুজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গড়িয়ালা গ্রামের পলি খাতুন (৪৫)। তাঁর স্বামীর নাম আলাউদ্দিন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাজা মণ্ডল (৫০), মুনছুর আলী (৪৮), মাহেন্দ্রচালক আবদুর রহিম (৪৫), আবির হোসেন (১৮), সিয়ান (১১), লিয়ন (১৬), এরশাদ আলী (৩০), রাজুসহ (৩০) ১০ জন। এ ঘটনায় ট্রাকচালকের আসনে থাকা সাগর হোসেনকে আটক করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকার জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝিনাইদহ থেকে যাত্রী নিয়ে মাহেন্দ্রটি বিষয়খালী বাজারে যাচ্ছিল। লাউদিয়ায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মাহেন্দ্রটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাক ও মাহেন্দ্র রাস্তার পাশের একটি দোকান ঘর ভেঙে পাশে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই এক নারীর মৃত্যু হয়। আহত হন মাহেন্দ্রর যাত্রীসহ দোকানে বসে থাকা আরও ১০ জন। সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক আরও এক নারীকে (৩৫) মৃত ঘোষণা করেন। আহত ব্যক্তিরা ঝিনাইদহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মৌচাক এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটায় দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। আহত হন একজন। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ট্রাকচালক চাঁপাইনবাবগঞ্জের নকরাছ পাড়া এলাকার বাবু মিয়া (৩২) ও ট্রাকের চালকের সহকারী একই এলাকার রহমত আলী (২৫)।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে মৌচাক এলাকায় ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি পাইপবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ঢাকাগামী আরএফএল ট্রাকের চালক ও সহকারী। এ সময় অপর ট্রাকের চালকের সহকারী শাহ আলম (৩৫) গুরুতর আহত হন। তাঁকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের লাশ হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক দুটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানান তিনি। 

সিলেট ও বরিশাল

সিলেট অফিস
সিলেটের বিয়ানীবাজারে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক তরুণী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত তাহমিনা বেগম (১৭) মৌলভীবাজারের ও বড়লেখার বন্নি গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের মেয়ে ও কামাল হোসেনের মেয়ে ইন্নি বেগম (১২)। সম্পর্কে তারা ফুফু-ভাতিজি। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন একই পরিবারের আরও তিন সদস্য।
আজ শনিবার বেলা ১২টার দিকে বিয়ানীবাজারের চারখাই এলাকার কামারগ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার থেকে ছেড়ে যাত্রীবাহি সিএনজিচালিত অটোরিকশা শনিবার বেলা ১২টার দিকে চারখাই কামারগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী এক তরুণী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় আহত হন সিএনজিচালিত অটোরিকশার আরও তিন যাত্রী ও চালক। পরে ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। পরে সেখান থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবণী শংকর কর প্রথম আলোকে জানান, দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই শিশু নিহত হয়েছেন। এতে একই পরিবারের আরও তিন সদস্য আহত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুত্বর বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ঘটনায় বেলা পৌনে তিনটা পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।

মানাউবী সিংহ, সিলেট
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালে ট্রাকের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী মাহেন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষে মা ও ছেলে নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরও ৪ জন।আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে দিকে নগরের সাগরদী আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পটুয়াখালী-বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানায়, গতকাল শনিবার দুপুর ১ টার দিকে নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে একটি মাহেন্দ্র যাত্রীদের নিয়ে রূপাতলী বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিল। মাহেন্দ্রটা সাগরদী এলাকা অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে দেলোয়ারা বেগম (৬০) নিহত এবং গুরুতর আহত হন আরো পাঁচজন যাত্রী। তাৎক্ষণিক তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর নিহত দেলায়ারা বেগমের ছেলে মো. শিপনকে (৩৫) মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

নিহতদের স্বজনরা জানান, তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার শ্রীরামকাঠি গ্রামে। ডাক্তার দেখানোর জন্য গতকাল সকালে তাঁরা বরিশালে এসেছিলেন । ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দেলোয়ারা বেগম (৬০) নলছিটি উপজেলার শ্রীরামকাঠি গ্রামের মালেক হাওলাদারের স্ত্রী ও শিপন তাদের ছেলে।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মালেক হাওলাদারের অপর ছেলে মো. স্বপন ও স্বপনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম এবং তাদের ভাইয়ের ছেলে রবিউল এবং স্বজন আনিসুর রহমান। তাদের সবাইকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত ও আহতরা সবাই একই পরিবারের।পুলিশ জানায়, ঘঠনার পর ট্রাক ও ট্রাকের একজন সহকারীকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম দুপুরে বলেন, মরদেহ দুটি ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার এই একই সড়কে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের কাজে নিয়োজিত বিআরটিসির দ্বিতল বাস ও অপর একটি যাত্রীবাহী মাহেন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারীসহ দুজন নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হন আরও ছয় যাত্রী। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল শনিবার একই সড়কের নিকট দূরত্বে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ছমিরুন বেগম (৬৫) নামের এক নারী নিহত হন। চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে তাঁকে বহনকারী অটোরিকশাটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।

আজ সকাল ছয়টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার লোহাইউনি চা-বাগান এলাকায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চালকসহ আরও চারজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছমিরুন বেগম শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। প্রায় চার দিন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। লোহাইউনি এলাকায় পৌঁছার পর চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে গাড়িটি রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে ছমিরুন বেগম মারা যান।

আহত হয়েছেন চালক মুসলিম মিয়া (৩৫), যাত্রী আমিনা বেগম (৪০), আবুল মিয়া (৫) ও আরজান বেগম (৭)। এঁদের মধ্যে আহত চালককে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল বাশার প্রথম আলোকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।