৩ মাসের কমিটির ৭৫ মাস পার

২০১৩ সালের ১৪ জুলাই ১০১ সদস্যের নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এই কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। কিন্তু ৭৫ মাসেও সম্মেলন করতে পারেনি সংগঠনটি। এই ব্যর্থতার জন্য যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে পরোক্ষভাবে দায়ী করা হচ্ছে।

দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যক্তিগত ইচ্ছায় যুবলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। ফলে চট্টগ্রামের যুবলীগের ওপর তাঁর ব্যাপক প্রভাব ছিল। তাঁর অসাংগঠনিক প্রভাবের কারণে চট্টগ্রাম নগরের ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৮টিতে কোনো সম্মেলন হয়নি। বরং স্থানীয় যুবলীগের কিছু নেতা ওমর ফারুক চৌধুরীকে তোষণে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

নগর যুবলীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে জানান, ওয়ার্ড কমিটি করার দায়িত্ব আহ্বায়ক কমিটির। কিন্তু যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় সাংসদের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও কাউন্সিলরদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে মুরুব্বি সংগঠন নগর আওয়ামী লীগের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

যুবলীগের এই নেতা আরও জানান, ওমর ফারুক চৌধুরীর কারণে চট্টগ্রাম যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি হতে পারেনি। তিনি ধনী নেতা তথা টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের কথা বেশি শুনতেন। এ কারণে হাইব্রিড, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের আধিপত্য সংগঠনে বেড়ে যায়, যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে।

৭৫ মাসেও ওয়ার্ড কমিটি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন এবং আন্দোলন–সংগ্রাম একটা বড় বিষয় ছিল। এ ছাড়া মুরুব্বি সংগঠনের নেতাদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে কমিটি করতে পারিনি।’

মুরুব্বি সংগঠনের রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে মহিউদ্দিন বাচ্চু খোলাসা করে কিছু বলেননি। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ছিল।

২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক ও দেলোয়ার হোসেন, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক ও দিদারুল আলমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তাঁরা পাঁচজনই প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। আহ্বায়ক কমিটিতে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীর সংখ্যা আটজন।

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বর্তমান মেয়র নাছির উদ্দীনের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেন। মহিউদ্দিন বাচ্চু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংগঠনের আদর্শ ও রীতি–নীতির মধ্যে রাজনীতি করেছি।’ তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।

এদিকে যুবলীগের কমিটি না হওয়ার পেছনে ঘুরেফিরে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম আসছে। কারণ, চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সম্মেলনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ২৫ জন করে কাউন্সিলর নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি। তিনি বলেছিলেন স্থানীয় সাংসদেরা কাউন্সিলর ঠিক করে দেবেন। অথচ সংগঠনের গঠনতন্ত্রে ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্ধারণের দায়িত্ব যুবলীগের কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। ওমর ফারুকের এই সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হন।

এ বিষয়ে জানতে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নগর যুবলীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) ঘুণে ধরা সংগঠনে যেভাবে হাত দিয়েছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত। তিনি যুবলীগকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের কংগ্রেসের (সম্মেলন) পর চট্টগ্রাম যুবলীগকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা চাই সংগঠন শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড়াক।’

নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক মনে করেন, সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। তিনি বলেন, হাইব্রিড এবং চাঁদাবাজদের বিতাড়িত করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওয়ার্ড ও থানা যুবলীগের কমিটি গঠনের সময় এসেছে। এতে ত্যাগী নেতারা দায়িত্বে আসার সুযোগ পাবেন।