রাবির সেই ছাত্রের মাথায় ছয় সেলাই

নিজের ক্যাম্পাসে রাবি ছাত্র ফিরোজ ছিনতাইকারীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। এতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী, ১৯ অক্টোবর। ছবি: তাপস কুমার সরকার
নিজের ক্যাম্পাসে রাবি ছাত্র ফিরোজ ছিনতাইকারীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। এতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী, ১৯ অক্টোবর। ছবি: তাপস কুমার সরকার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে ফিরোজ আনাম নামের এক ছাত্র আহত হয়েছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই ছাত্রের মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মতিহার থানার পুলিশ।

মো. ফিরোজ আনাম অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অর্থনীতি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফিরোজ তাঁর কলেজের এক সহপাঠীর সঙ্গে গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামের পাশে হাঁটছিলেন। সেখানে কয়েকজন যুবক তাঁদের পথরোধ করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ফিরোজ ছিনতাইকারীদের পিছু নেন। এতে ছিনতাইকারীরা ফিরোজকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা হাতুড়ির মতো কিছু একটা দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। অন্ধকার থাকায় তিনি অস্ত্রটি ঠিকমতো দেখতে পাননি।

সহপাঠীরা জানান, মারধরের কারণে ফিরোজ মাথা ও ঘাড়ে আঘাত পান। মারধরের সময় ফিরোজের সঙ্গে থাকা সহপাঠী চিৎকার শুরু করলে ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় আশপাশের লোকজন এসে ফিরোজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেন। সেখান থেকে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে অর্থনীতি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ফিরোজের মাথায় ছয়টি সেলাইয়ের প্রয়োজন পড়েছে। গতকাল সকালে সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এখন ফিরোজের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে।

মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফিরোজ আনাম বাদী হয়ে মতিহার থানায় মামলা করেন। এতে তিনি অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় রাকেশ ও রুমেল নামের স্থানীয় দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বেলা তিনটার দিকে তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ফিরোজের ঘটনায় গতকাল রাতেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ ভোররাত চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চেয়ে আজ দুপুরে শিক্ষার্থী আবারও আন্দোলন শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পাশে বদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্র সমিতি মানববন্ধন করে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী মানববন্ধন করেন। তাঁরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ফিরোজের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখান থেকে তাঁরা প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা একটার দিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা আগামী বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

আন্দোলনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আগামী সোম ও মঙ্গলবার ভর্তি পরীক্ষার কারণে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণ না হলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর আবার আন্দোলন শুরু করব।’
আরও পড়ুন:
রাবি শিক্ষার্থী ছুরিকাহত, মহাসড়ক অবরোধ