হাত নেই তাতে কী?

জন্ম থেকে আয়শার দুই হাত নেই। সবই করেন পা দিয়ে। পায়ের আঙুলে কলম চালিয়ে পড়ছেন স্নাতকোত্তরে। সম্প্রতি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামে আয়শার বাড়িতে।  প্রথম আলো
জন্ম থেকে আয়শার দুই হাত নেই। সবই করেন পা দিয়ে। পায়ের আঙুলে কলম চালিয়ে পড়ছেন স্নাতকোত্তরে। সম্প্রতি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামে আয়শার বাড়িতে। প্রথম আলো

জন্ম থেকে দুই হাত নেই। তবু থেমেও নেই কিছু। রান্নাবান্না থেকে কম্পিউটার চালানো, মুঠোফোনে কথা বলা—সবই করেন পা দিয়ে। পায়ের আঙুলে কলম চালিয়ে পড়ছেন স্নাতকোত্তরে। দিচ্ছেন বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা। মনের জোরে এমন সব দুঃসাধ্য কাজ করে চলেছেন আয়শা আক্তার।

আয়শার (২৪) বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামে। বাবা আবদুল লতিফ গরিব কৃষক। মা মাজেদা বেগম গৃহিণী। চার বোনের মধ্যে আয়শা মেজ। বড় ও ছোট বোনদের বিয়ে হয়েছে। আয়শা গাইবান্ধা সরকারি কলেজে স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষে পড়ছেন।

আয়শার মা মাজেদা বেগম বলেন, ‘আয়শা জন্মের পর ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়ি। শিশুকালে হাঁটতে কিছুটা সমস্যা হয়। সাড়ে চার বছর বয়সের পর হাঁটতে শেখে। বড় দুই মেয়ে বাড়িতে পড়তে বসলে আয়শা আগ্রহ নিয়ে পাশে বসে থাকত। আগ্রহ দেখে ওকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে বোনেরা। পরে আয়শাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই।’

আয়শার বড় বোন নুরজাহান বেগম জানান, আয়শা ২০১২ সালে কচুয়াহাট এইচ আর এম বালিকা বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ৯৯ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৪ সালে সাঘাটা উদয়ন মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে আবার জিপিএ ৩ দশমিক ৯৯ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৭ সালে একই কলেজ থেকে তিনি স্নাতকে ৩ দশমিক ০৯ পান। ২০১৮ সালে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন। শুধু তা-ই নয়, আয়শা ছয় মাস মেয়াদি কোর্স করে কম্পিউটার শিখেছেন। তিনি কয়েক প্রকারের সেলাই জানেন।

নুরজাহান বলেন, ‘স্নাতকোত্তরে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে এখনো বই কিনতে পারেনি আয়শা। ওর একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হয়েছে। সে তিন মাস পর ২ হাজার ১০০ করে টাকা পায়। তা দিয়ে পড়ালেখার খরচ জোগানো সম্ভব হচ্ছে না।’ সাঘাটা উদয়ন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আয়শার লেখাপড়ার ইচ্ছা প্রবল। সে অন্য মেয়েদের মতো সবই করতে পারে। সে ক্লাস ফাঁকি দেয়নি। লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কলেজে তার একটা চাকরি ব্যবস্থার করার চেষ্টা চলছে।’

আয়শা আক্তার বলেন, তিনি ঘর গোছানো, পরিষ্কার করা, দরজায় লাগানো তালা চাবি দিয়ে খোলা, কাপড় ভাঁজ করাসহ দৈনন্দিন সব কাজ করতে পারেন। তিনি লেখাপড়া শিখে সরকারি চাকরি করতে চান। এর মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের দুঃখ ঘোচাতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘হাত নেই বলে কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সুযোগ-সুবিধা পেলে নিজের, পরিবারের ও দেশের জন্য অনেক কাজ করতে পারেন। তাঁরা শুধু সেই সুযোগটুকু চান।’

জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এমদাদুল হক প্রামাণিক বলেন, আয়শার বিষয়টা জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আয়শার পড়ালেখা ও চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।