ময়মনসিংহে আবার জমি অধিগ্রহণের চিন্তা

নতুন বিভাগীয় শহর গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ–জটিলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমাবেশ। গতকাল বিকেলে সদরের জয় বাংলা বাজারে।  ছবি: প্রথম আলো
নতুন বিভাগীয় শহর গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ–জটিলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমাবেশ। গতকাল বিকেলে সদরের জয় বাংলা বাজারে। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নতুন বিভাগীয় শহরের জন্য দুটি প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে দুটি জমি অধিগ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অধিগ্রহণ করা বেশির ভাগ জমিই হতে পারে খাস। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করা হলেও মানুষের বসতবাড়ি যাতে রক্ষা হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার জয় বাংলা বাজারে সম্ভাব্য অধিগ্রহণ করা এলাকার মানুষের এক সমাবেশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, টেমস নদীর দুই পাশে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা, লন্ডন শহরের আদলে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাশে হবে ময়মনসিংহ শহর।

চার বছর আগে ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন হয়। এর কয়েক মাস পর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন ময়মনসিংহ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ও আধুনিক শহর গড়ার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ মূল শহর ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই জমির মধ্যে অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান থাকায় চর এলাকার মানুষ নিজের বসতবাড়ি রক্ষার জন্য আন্দোলনে নামেন। দুই বছরের বেশি সময় আন্দোলনের পর সরকার ওই জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। সরকারিভাবে প্রকল্পটি বাতিল করার পর আবারও নতুনভাবে জমি অধিগ্রহণ করে নতুন শহর ও বিভাগীয় কার্যালয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র।

চর এলাকার বসতভিটা রক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, নতুন প্রকল্প নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান চর আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার পর সিদ্ধান্ত হয় গতকাল শনিবার এ বিষয়ে চর এলাকার সাধারণ বাসিন্দাদের সঙ্গে ইউএনও কথা বলবেন। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল বিকেলে জয় বাংলা বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে ইউএনও হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন করে ৯৫০ একর ও ২ হাজার ৯৮৩ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৯৫০ একর জমির যে পরিকল্পনা, সেটি বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রশাসনের। ৯৫০ একর জমির বেশির ভাগই খাস। এই জমি অধিগ্রহণ করা হলে মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। বাতিল হওয়া সাড়ে ৪ হাজার একর জমির প্রকল্পে চর এলাকার ছয়–সাতটি গ্রাম ছিল। নতুন যে প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে, সেখানে রয়েছে তিনটি গ্রাম। গ্রামগুলো হচ্ছে চর জেলখানা, গোবিন্দাপুর ও পাড়া লক্ষ্মীর আলগী।

ইউএনও তাঁর বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ৯৫০ একর জমি প্রাথমিক পরিকল্পনায় থাকলেও পাশাপাশি ২ হাজার ৯৮৩ একর জমি নিয়েও একটি পরিকল্পনা আছে। সে জন্য ওই এলাকায় একটি জরিপ চালাতে হতে পারে।

ইউএনওর এ বক্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সমাবেশে উপস্থিত অনেকে জানান, তাঁরা ৯৫০ একর জমির বাইরে অন্য কোনো জমিতে জরিপ চালানোর পক্ষে নন। পরে ইউএনও বলেন, যা কিছু হবে, তা আপনাদের ভালোর জন্য। চর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা না বলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। জমি অধিগ্রহণ হলে জমির দাম প্রকাশ্যে দেওয়া হবে। কেউ ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন না।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন। তাঁরা চরবাসীর পক্ষে ইউএনওকে অনুরোধ করেন, অধিগ্রহণে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

বিভাগ বাস্তবায়নের পরপর জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর চর এলাকার মানুষ নিজেদের বসতবাড়ি রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন করেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা নতুন শহরের বিপক্ষে নন। তাঁদের দাবি, বসতবাড়ি রক্ষা করে জমি অধিগ্রহণ। এ লক্ষ্যে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনের কাছে একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন।