স্কুলের মাঠ দখল করে চাষাবাদ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ খেলার মাঠটি এখন মাষকলাইয়ের খেত। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ খেলার মাঠটি এখন মাষকলাইয়ের খেত। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ দখল করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে মাঠটি ঘেরাও করে মাষকলাইয়ের আবাদ করা হয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সমাবেশ, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে।

দৌলতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে একটি ডিগ্রি কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত যাতায়াতসহ খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ওই তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ১৯০৩ সালে এলাকায় বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর একই স্থানে মোট আট বিঘা জমি এক করে ১৯১৮ সালে দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় এবং পরে সেখানে একটি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। পাঁচ বিঘা জমি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রয়েছে বিশাল এক খেলার মাঠ। যুবলীগের স্থানীয় নেতা শাহীন রেজা, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় সংগঠন দীবাকর সংসদের সদস্যরা এই মাঠ ঘিরে জালের বেড়া দিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে হাল চাষ করে মাষকলাই রোপণ করেছেন। এরপর থেকে মাঠটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত, নিয়মিত সমাবেশ, শরীরচর্চা ও খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, স্কুল মাঠটি এভাবে দখল হবে, তা তারা কখনো কল্পনা করেনি। যারা কাজটি করেছে, তারা প্রভাবশালী হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করতে পারছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্য আলতাফ হোসেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী লাল মিয়া, বদর উদ্দিন, সাবেক সেনাসদস্য আবদুস ছালাম অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ থাকে শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য, সমাবেশ করার জন্য; কৃষিকাজ করার জন্য নয়। কিন্তু দৌলতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠটি এখন খেতে পরিণত করা হয়েছে। প্রভাব খাটিয়ে মাঠটি দখল করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সমাবেশসহ খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ারা পাশাপাশি যাতায়াতেও সমস্যায় পড়ছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বেলকুচি পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস বলেন, ‘মাঠ দখলের বিষয়টি জেনে আমি নিজেও হতবাক হয়েছি। তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং আমাকেও কোনো কিছু জানায়নি। একেবারে যেন মগের মুলুক। দীর্ঘদিন ধরেই মহলটি স্কুল-কলেজে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অনিয়ম করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের স্থানীয় নেতা শাহীন রেজা বলেন, উঁচু-নিচু মাঠটি সমান করতে হাল চাষ দিয়ে ক্ষণিকের জন্য মাষকলাই লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে সমালোচনা হওয়ায় আমরা তা পরিষ্কার করতে শুরু করেছি। বর্তমানে তা গরু দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।’ মাষকলাই চাষের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, যারা মাঠ দখল করে মাষকলাই আবাদ করছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।