তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাটের জন্য ধরা ডিআইজি প্রিজন্স

কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বজলুর রশীদ। ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বজলুর রশীদ। ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেটের স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পে ২ হাজার ৯৮১ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। দাম ৩ কোটি ৮ লাখ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে বুকিং দিয়ে এরই মধ্যে পুরো টাকাই পরিশোধ করেছেন তিনি। অথচ এই লেনদেনের বিষয়টি তাঁর আয়কর নথিতে নেই। একই সঙ্গে এর বৈধ কোনো উৎসও তিনি দেখাতে পারেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বজলুর রশীদ। নানা দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে বজলুর রশীদ ও তাঁর স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ফ্ল্যাটের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই টাকা তাঁর জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই জিজ্ঞাসাবাদ পর্যায়েই বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এ একটি মামলা করেন উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। আর ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদক সচিব দিলোয়ার বখত জানান, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দিলোয়ার বখত বলেন, অবৈধ সম্পদের আয় থেকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর রূপায়ণ বিল্ডার্সে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে তাঁর নামে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, কারা অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। দুদক পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে কারা অধিদপ্তর নিয়ে দুদকে যে অনুসন্ধান চলছে, তাতে বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই–বাছাই করে তাঁকে তলব করার প্রস্তুতি চলছিল।

তবে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুষের টাকা স্থানান্তর করতে ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করেন। কুরিয়ারে তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছে বিভিন্ন ধাপে কয়েক কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে সিম তুলে ওই মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন হতো। নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে পাঠানো টাকা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে কুরিয়ার থেকে তুলে নিতেন তাঁর স্ত্রী। প্রতিবেদনটি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে তলব করা হয়।

দুদকের সূত্রটি বলছে, বজলুর রশীদের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, সেগুলো যাচাই–বাছাই করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। তিনি বাইরে থাকলে অভিযোগ–সম্পর্কিত নানা আলামত নষ্ট ও সম্পদ স্থানান্তর বা রূপান্তর করে ফেলতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত মামলাটি করা হয়।

বজলুর রশীদের গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার নিশিন্দি গ্রামে। এর আগে রাজশাহীতে ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেল সুপার পদে বরগুনায় কর্মজীবন শুরু করে সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি এবং জ্যেষ্ঠ জেল সুপার হিসেবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ছিলেন তিনি।