শিশু রমজান হত্যার বর্ণনা দিল কিশোরী স্বজন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ছয় বছরের শিশু রমজান হত্যা মামলা নতুন মোড় নিয়েছে। এ মামলায় শিশুটির স্বজন এক কিশোরীকে (১৩) আটক করেছে পুলিশ। আদালতে ওই কিশোরী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গত বুধবার বিকেলে লোহাগড়া পৌর এলাকার সিঙ্গা গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় একটি বাগানের পাশে রমজানের লাশ পাওয়া যায়। শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল রমজান। এ হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ শিশুটির বাবা, মামা, খালা ও খালুকে গ্রেপ্তার করে গতকাল শনিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এর আগে হত্যার ঘটনায় শিশুটির নানা হাবিবুর রহমান শেখ বাদী হয়ে হত্যাকারী অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে গত শুক্রবার বিকেলে লোহাগড়া থানায় মামলা করেন। শিশুটির বাবা ও নানা উভয়ই সিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। উভয় পরিবারের সদস্যরা দরিদ্র ও কৃষিজীবী।

স্থানীয় লোকজন জানান, শিশুটির মা মাবিয়া আক্তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছিলেন। বাবা ইলিয়াস শেখ ছিলেন বিবাহিত। এরপরও তিনি মাবিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে স্থানীয় লোকজনের চাপে তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। জন্ম হয় রমজানের। রমজানের জন্মের পর থেকে তাকে নিয়ে শুরু হয় দুই পরিবারের লড়াই। বিয়ের পর থেকে রমজানকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই ছিলেন মাবিয়া। কিছুদিন পর তাঁকে তালাক দেন ইলিয়াস শেখ। আদালতের রায়ে নানাবাড়িতে ছেলের ভরণপোষণ দিচ্ছিলেন ইলিয়াস। কয়েক মাস টাকা বাকি হওয়ায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কারাগারেও যেতে হয় ইলিয়াসকে। তিন বছর আগে হৃদ্‌রোগে মারা যান রমজানের মা মাবিয়া। এরপর অনাদরে, অযত্নে শিশুটি নানাবাড়িতেই বড় হচ্ছিল। মামা, মামি, খালা এবং মামাতো ও খালাতো ভাইবোনেরা প্রায়ই তাকে মারধর করত।

হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিলটন কুমার দেবদাস প্রথম আলোকে জানান, একই বাড়িতে থাকত ওই কিশোরী ও রমজান। ওই কিশোরীকে মাঝেমধ্যেই নাম বিকৃত করে খ্যাপাত রমজান। বুধবার দুপুরে এভাবে খ্যাপাতে থাকলে রমজানকে মারধর করে ওই কিশোরী। রমজান বাড়ির উঠানে পড়ে গেলে তার গলা চেপে ধরে সে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে রমজানের মৃত্যু হয়। তখনই রমজানের মামি পুতুল বেগম রমজানের লাশ কোলে নিয়ে একটি বাগানের পাশে ফেলে আসে।

মিলটন কুমার দেবদাস আরও বলেন, ওই কিশোরী ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওই বাড়ির আরেক শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রথমে হত্যার রহস্য উদ্ধার করা হয়। ওই কিশোরী ও পুতুল বেগমকে এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।