২৫ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে টাকা দিয়েছেন সম্রাট

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী (সম্রাট)।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী (সম্রাট)।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের এক প্রার্থীকে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী (সম্রাট)। তাঁর মতো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২৫ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে টাকা দিয়েছেন। রিমান্ডে থাকা সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে র‍্যাব।

রমনা থানায় করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় সম্রাট ১০ দিন এবং তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমান ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গতকাল তাঁদের রিমান্ডের পাঁচ দিন পার হয়েছে। র‍্যাব-১ কার্যালয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন, মতিঝিলের ছয়টি ক্লাব থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে ৫০–৬০ লাখ টাকা চাঁদা পেতেন। ক্যাসিনোর পাশাপাশি গুলিস্তানের ছয়টি মার্কেট থেকে তোলা চাঁদার টাকাও তাঁর কাছে আসত। মতিঝিল ও গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ–ছয় লাখ টাকা করে পেতেন তিনি। এসব টাকার হিসাব-নিকাশ রাখতেন আরমান। আরমান সেই টাকার ভাগ বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে পৌঁছে দিতেন। যাঁদের টাকা দিয়েছেন, তাঁদের সবার নাম র‍্যাবকে বলেছেন সম্রাট। র‍্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 

তদন্তে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, সম্রাট শারীরিকভাবে অসুস্থ দাবি করায় তাঁকে সাবধানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি ভেঙে পড়েছেন। সম্রাট তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর যাঁরা ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তাঁকে থাকতে বলেছিলেন, একপর্যায়ে তাঁদের সবাই নিরাপদে
সরে পড়েন। 

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সম্রাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন এবং অনেকের নামও বলেছেন। এসব তথ্য যাচাই–বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আরমানকে আজ সোমবার আবার রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হবে। 

৬ অক্টোবর ভোরে ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। সেখানে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়ায় আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আর সম্রাটের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দিন দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালান। এই ভবনে সম্রাটের কার্যালয় ছিল। সেখানে ক্যাঙারুর চামড়া পাওয়া যাওয়ায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গ্রেপ্তারের পর দুজনকেই যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে থাকা অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম ভূঁইয়া ওরফে সেলিম প্রধানকে আজ র‍্যাব-১-এর কার্যালয়ে আনা হতে পারে। গত শুক্রবার তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। কারাগারে থাকা সেলিমকে যেকোনো দিন র‍্যাব-১–এর কার্যালয়ে রিমান্ডে নিয়ে আসা হবে। 

এ ছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগের নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম, ঢাকা মহানগর উত্তর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান কারাগারে আছেন। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে অবৈধ পিস্তল ও মদসহ বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব র‍্যাবের হেফাজতে আছেন।