১৭ 'বাবা' চালাচ্ছেন রামগঞ্জ ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগ

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘বাবা’রা। প্রায় চার বছর আগে গঠিত উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ৭ সহসভাপতি, ২ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২৬ জন নেতা বিবাহিত। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন সন্তানের বাবা। তাঁদের সবার বয়স ৩০-এর ওপরে।

১২১ সদস্যের এ কমিটির আরও অন্তত ৩০ জন নেতা ব্যবসা ও ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৬ সালের মে মাসে করা এই কমিটির অধিকাংশ নেতার বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর। তবে রামগঞ্জ কমিটি চলছে প্রায় চার বছর ধরে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ২৭ বছর বয়সী যেকোনো ছাত্র বা ছাত্রী ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারবেন। তবে গত বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানোর ঘোষণা দেন। অর্থাৎ বর্তমানে ২৯ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীরাই ছাত্রলীগের কমিটিতে সদস্য হতে পারবেন।

বিবাহিত ব্যক্তিদের বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু বলা নেই। তবে শেখ হাসিনার নির্দেশের কারণে বিবাহিত ব্যক্তিদের কোনো পদে না রাখা অলিখিত নিয়ম বলেই মনে করা হয় ছাত্রলীগে।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে শুভ পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের নামে সাফওয়া এন্টারপ্রাইজ নামে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সহসভাপতি রাশেদ আলম ভূঁইয়া চার বছর আগে বিয়ে করেন। তিনিও দুই সন্তানের বাবা। এখন তিনি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন। আরেক সহসভাপতি এস এম মোজাম্মেল হক বিয়ে করেছেন ছয় বছর আগে। তাঁর দুই মেয়ে আছে। অন্য পাঁচ সহসভাপতি সম্রাট মাহমুদ, কাজী শহিদুল ইসলাম, শেখ শোভন, পারভেজ আলম ও জসিম উদ্দিন ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। তাঁরা সবাই সন্তানের বাবা। যুগ্ম সম্পাদক সোহেল মাহমুদ, মাহবুবুর রহমান গত বছর বিয়ে করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল হোসেন, রহমত উল্যা ও তানজিব সরোয়ার বিয়ে করেন এ বছরের শুরুতে।

>এক বছরের কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে চার বছর চলছে
১২১ সদস্যের কমিটির অধিকাংশের ছাত্রত্ব নেই

বিবাহিত ব্যক্তিদের বাইরে অন্য নেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এর মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক গাজী, রবিন সিদ্দিকী, রুভেল হোসেন, সহসভাপতি রায়হান ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ও সদস্য নাইমুর রহমান ছাত্রত্ব শেষ করে এখন প্রবাসে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, কমিটির অনেক নেতাই বিবাহিত, এটি সত্য। কিন্তু তাঁরা দলের সব কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁরা রাজনীতিতে সক্রিয়।

সহসভাপতি এস এম মোজাম্মেল হক দাবি করেন, যখন তিনি দায়িত্ব পান, তখন বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, কমিটির বেশির ভাগ সদস্যের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুনদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।

এদিকে রামগঞ্জ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোরশেদুল আমিন ১৩ অক্টোবর রামগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বলা হয়, নোয়াগাঁও, ইছাপুর, লামচর, করপাড়া ও চণ্ডীপুর ইউনিয়নে টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

মোরশেদুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুরু থেকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কমিটি দিয়েছেন। এখন পাঁচটি ইউনিয়নে কমিটি দেওয়ার জন্য টাকা লেনদেন হচ্ছে।

তবে বর্তমান কমিটির সভাপতি কামরুল হাসান ফয়সাল মালের দাবি, রামগঞ্জ ছাত্রলীগ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। দলের একটি পক্ষ নেতৃত্বে আসার জন্য মিথ্যাচার করছে। টাকার বিনিময়ে ইউনিয়নে কোনো কমিটি দেওয়া হয়নি।

তবে রামগঞ্জ ছাত্রলীগের একজন সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী নাম প্রকাশ না করে জানান, বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের কমপক্ষে ২৬ জন নেতা বিয়ে করেছেন। বেশির ভাগের সন্তানও আছে। ৭০-৮০ জন নেতার ছাত্রত্ব নেই। দলের নেতা-কর্মীরা অনেকবার দাবি করার পরও নতুন কমিটি হচ্ছে না। এই কমিটির নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন না। শুধু মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন। এতে স্থানীয় মানুষজন চরম ক্ষুব্ধ।

ছাত্রদেরই ছাত্রলীগ করা উচিত জানিয়ে সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বিবাহিত, তাঁদের ছাত্রলীগ করা ঠিক নয়। কিন্তু নানা কারণে রামগঞ্জে নতুন কমিটি করা যায়নি। ছাত্রত্ব রয়েছে এবং বিবাহিত নন—এমন নেতাদের দিয়ে আগামী মাসে সম্মেলন করে নতুন কমিটি করা হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের তিনজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা থাকবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে তাঁরা কাজ করবেন। কিন্তু রামগঞ্জ ছাত্রলীগের আদুভাই নেতারা ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে। পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।