চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলছে না মেহেরপুরের বাস

চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়ার বাসস্ট্যান্ডে আটকে রাখা হয়েছে দুটি বাস। ছবি: প্রথম আলো
চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়ার বাসস্ট্যান্ডে আটকে রাখা হয়েছে দুটি বাস। ছবি: প্রথম আলো

দুই জেলার সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মেহেরপুরের মালিকদের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল থেকে ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল পথের বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আজ মেহেরপুর থেকে ঢাকাগামী এসএম পরিবহন ও বরিশালগামী আল সানি পরিবহনের দুটি বাস জোর করে চালানোর চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়। সদর উপজেলার বদরগঞ্জ বাজারে বাস দুটি থামিয়ে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে এসে আটক করে রাখা হয়। এতে মেহেরপুর থেকে ঢাকাগামী বাসগুলো বিকল্প পথে কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করলেও বরিশাল ও খুলনা পথের বাসগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই জেলার যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রিপের সময় নিয়ে দুই জেলার পরিবহন মালিকদের দ্বন্দ্বে গত ২৫ জুলাই থেকে চুয়াডাঙ্গা- মেহেরপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে টানা ৮৮ দিন মেহেরপুরের দরবেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বাস চলাচল করছে। ফলে, ওই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের প্রায় তিন মাস ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সময় দূরপাল্লার বাসগুলো নিয়মিত চলাচল করলেও আজ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ হলো।

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কে ২৫ জুলাইয়ের আগের অবস্থায় বাস চলাচলের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছিল। গত ৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় প্রশাসনকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়। অন্যথায় ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জেলার সব কটি পথে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেওয়া হয়। সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসে।

১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরদিন ২ অক্টোবর সকাল থেকে মেহেরপুর জেলার দূরপাল্লার বাসগুলো চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলতে দেবে না। সংকট মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ২ অক্টোবর বিকেলে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) বিশেষ সভা আহ্বান করেন। জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে সভায় দুই জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে জেলা প্রশাসক মেহেরপুরের মালিক-শ্রমিকদের ২৫ জুলাইয়ের আগের অবস্থায় বাস চলাচল চালানোর জন্য বলেন। মেহেরপুরের মালিক-শ্রমিক নেতারা তা মেনেও নেন। মেহেরপুরের পক্ষ থেকে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়ে নিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ৮ অক্টোবর তিনি দ্বিতীয় দফায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। কিন্তু, জেলা প্রশাসককে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতিও রাখেননি, শুরু হয়নি চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর পথে সরাসরি বাস চলাচল।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. সালাউদ্দীন জানান, ‘মেহেরপুরের মালিকেরা তাঁদের নিজেদের গাড়ি শহরের ভেতর থেকে ছেড়ে এলেও চুয়াডাঙ্গার গাড়িগুলো প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নতুন টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসতে চাপ দিয়ে আসছিল। এতে আমাদের বাসগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় চুয়াডাঙ্গার মালিকরা রাজি হননি। ২৫ জুলাই থেকে দরবেশপুর পর্যন্ত চলেছে। সমস্যা সমাধানে বারবার উদ্যোগ নিলেও মেহেরপুরের মালিক-শ্রমিকেরা বারবার কালক্ষেপণ করছেন।’

মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মতিয়ার রহমানের মুঠোফোনে কল করলেও তাঁরা ধরেননি।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সর্বশেষ সভায় মেহেরপুরের মালিক-শ্রমিকেরা সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। এর পরও কেন গাড়ি চলছে না, তা বোধগম্য নয়। দুই জেলার মালিক-শ্রমিকদের আন্তরিক হয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা বারবার এক বিষয় নিয়ে বসতে পারি না।’