নতুন মা-বাবা পেল নবজাতকটি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশুটির জন্ম হয়। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর মা তার উধাও। অনেক খোঁজাখুঁজি হলো। শিশুটির মা আর ফিরে আসেননি। তবে এসেছেন এক নিঃসন্তান দম্পতি। তাঁরা শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন।

গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছেলেশিশুটিকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

এ সময় জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইলিয়াস মেহেদী, সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন রহমান চৌধুরী প্রমুখ।

সমাজসেবা কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৩ অক্টোবর রাত ১১টায় কে বা কারা অজ্ঞাতনামা মানসিক ও বাক্‌প্রতিবন্ধী প্রসূতিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রেখে চলে যান। হাসপাতালের অফিস সহায়ক মোতাহের হোসেন ওই প্রসূতিকে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি ওয়ার্ডে (লেবার বিভাগ) ভর্তি করান। রাত তিনটার দিকে নার্সদের সহযোগিতায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ওই প্রসূতি ছেলেশিশুটির জন্ম দেন। তবে নবজাতককে হাসপাতালে ফেলে রেখেই সেই নারী পালিয়ে যান।

পরদিন সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে অবহিত
করা হয়।

এদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি ওয়ার্ডের একটি বিশেষ কক্ষে (ভিআইপি) শিশুটিকে মায়ের যত্নে দেখাশোনা
করেন নার্সরা।

ওই দম্পতি পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে তাঁরা বলেন, ‘আমরা নিঃসন্তান। শিশুটিকে পরম যত্ন দিয়ে বড় করব। সন্তান কী, তা আমরা বুঝি। নিজের সন্তান থাকলে কেমন আদর করতাম, জানি না। তবে এই শিশুকে তার থেকে বেশি যত্ন, আদর, স্নেহ ও ভালোবাসায় বড় করে তুলব।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটিকে নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে চারটি আবেদন জমা পড়ে। পরে যাচাই-বাছাই করে ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়। সরকারি শিশু আইন ২০১৩-এর ধারা ৮৬ এবং উপধারা ১ ও ৩-এর বিকল্প পরিচর্যার অংশ হিসেবে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন বলেন, ‘ওই দম্পতিকে বলেছি, শিশুটি বড় হলে যেন বলা হয়, তার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘পিতা হিসেবে যিনি এই শিশুকে দত্তক নিয়েছেন, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। আশা করি, শিশুটি অকৃত্রিম স্নেহ-যত্ন পাবে।’