ভারতের জেলেদের বিরুদ্ধে ইলিশ ধরার অভিযোগ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতের জেলেরা ট্রলারে করে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বরগুনার মৎস্যজীবীরা। বাগেরহাটে বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরার সময় ভারতীয় জেলে আটকের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আর রাজশাহীতে পদ্মায় ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে বিএসএফ–বিজিবির মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে।

জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানিয়েছেন, ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা বলেশ্বর নদের মোহনা, বিষখালী দক্ষিণ ও গলাচিপার সোনার চর পর্যন্ত মাছ ধরেন। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে কয়েক বছর ধরে তাঁরা বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে বঙ্গোপসাগরসহ সারা দেশে ৯ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ শিকার, আহরণ, পরিবহন, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ ছাড়া জুন-জুলাই এবং ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকে।

বরগুনার পাথরঘাটার এফবি সীমা-২ ট্রলারের মাঝি জাকির হোসেন ও এফবি তরিকুল ট্রলারের মাঝি আল আমিন ৭ অক্টোবর বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরেন। ওই দুজনের বরাত দিয়ে জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহেও বিষখালী নদীর দক্ষিণ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ভারতের জেলেরা শতাধিক ট্রলার নিয়ে মাছ ধরেছেন।

আবুল হোসেন ফরাজী জানান, অবৈধভাবে মাছ ধরার প্রতিবাদে কয়েক বছর ধরে তাঁরা আন্দোলন করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তবু নিষেধাজ্ঞার সময়েও ভারতীয় ট্রলারে মাছ শিকার বন্ধ হয়নি। একইভাবে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ করেন জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন।

জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ভারতের জেলেরা গভীর সাগরসহ পাথরঘাটা–সংলগ্ন এলাকা থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপার সোনারচর পর্যন্ত মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের ট্রলারে সাধারণত কমলা ও আকাশি রং দেওয়া থাকে। তাঁরা সাধারণত ইলিশের লম্বা জাল (প্রস্থে ১০০ হাত), ট্রলি জাল ও কারেন্ট জাল ব্যবহার করেন। বাধা দিলে তাঁরা মাইকে হুমকি দেন এবং বাংলাদেশের ট্রলারে হামলা ও জেলেদের ওপর নির্যাতন চালান।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কর্মকর্তা (অপারেশন) ফারুক হোসেন গতকাল সোমবার মুঠোফোনে বলেন, ‘বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় ট্রলারের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে অভিযানে এ ধরনের কোনো ট্রলারের দেখা পাইনি। তা ছাড়া এ ঘটনায় জেলে বা ট্রলারমালিকেরাও কোনো অভিযোগ করেননি।’

আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় বঙ্গোপসাগর–সংলগ্ন ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে ১২ অক্টোবর রাতে ভারতীয় ১১ জন জেলে ও একটি মাছ ধরার ট্রলার আটক করে নৌবাহিনী। নৌবাহিনী সূত্রে জানা যায়, রাত ১০টার দিকে মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে বাংলাদেশের জলসীমায় বঙ্গোপসাগর–সংলগ্ন ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরার সময় নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস কপোতাক্ষ ভারতীয় জেলেদের একটি ট্রলার আটক করে। এ সময় এফবি হীরা পার্বতী নামের ভারতীয় ট্রলারটি থেকে ১১ ভারতীয় জেলেকে আটক করা হয়। পরদিন সকালে মাছ ধরার ট্রলারসহ তাঁদের মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ভারতীয় জেলেদের বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে একই এলাকা থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই দফায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ ধরার সময় টহলরত নৌবাহিনীর জাহাজ ভারতীয় ৩৮ জন জেলেসহ তিনটি ট্রলার আটক করে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ শিকারকে কেন্দ্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএসএফের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা সদরের বালুঘাট এলাকায় পদ্মা ও শাখা বড়াল নদের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। ওই রাতে বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়নের (১ বিজিবি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চারঘাট থানা এলাকায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মায় অভিযান পরিচালনার সময় তিন জেলেকে আটক করার চেষ্টা করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন পালিয়ে যান এবং একজনকে আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসা হয়। আটক ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত হয়। কিছুক্ষণ পর বিএসএফের চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিডবোট নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিজিবি টহল দলের কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে। আটক ভারতীয় নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে বলে জানালে তাঁরা ভারতীয় নাগরিককে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বিজিবির সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফের সদস্যরা বিজিবির ওপর ছয় থেকে আটটি গুলি করেন। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির সদস্যরা গুলি চালালে বিএসএফের সদস্যরা গুলি করতে করতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।