মায়ের একমাত্র অবলম্বন মেয়েটিও গেল চলে

যশোর
যশোর

মেয়েটি মাতৃগর্ভে থাকার সময় বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। এ খবর জেনে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন মা। নানার বাড়িতে ঠাঁই হয় মা ও মেয়ের। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা মেয়েটি পরিচিত অনেককেই বলত, সে লেখাপড়া শেষে মায়ের দেখভাল করবে, মায়ের কষ্ট দূর করবে। গতকাল রোববার রাতে মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে মাকে নিয়ে স্বপ্ন বোনা মেয়েটির। পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের দাবি, সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে কিশোরীর।

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় চৌগাছা বাজারের নিরিবিলিপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

মারা যাওয়া কিশোরীর নাম তন্বী খাতুন (১৩)। সে চৌগাছা কামিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামের তবিবর রহমানের মেয়ে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। তন্বী মা পপি খাতুনের সঙ্গে নানাবাড়িতে থাকত।

স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, তন্বীর নানার বাড়ি চৌগাছা বাজারের কাছে কাঁচাবাজার-সংলগ্ন তিন বিঘা জমির ওপর। বাড়িটি ঝোপঝাড়ে ভর্তি। মা ও মেয়ে যে কক্ষে থাকতেন, সেটা পাকা ঘর। তবে পাশে একটি টিনের ঘর রয়েছে, সেটি জিনিসপত্রে ঠাসা। শান্ত স্বভাবের কিশোরী মেয়েটির বাবা আরেকটি বিয়ে করায় এবং মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় মেয়েটির প্রতি সবাই বেশ স্নেহশীল ছিলেন। মেয়েটি পড়ালেখায়ও খুব ভালো ছিল।

তন্বীর ছোট মামা মিঠু দেওয়ান জানান, প্রতিদিনের মতো রোববার রাতে লেখাপড়া শেষে মায়ের সঙ্গে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে তন্বী। রাত ১০টার দিকে তাকে ঘরের মধ্যেই বিষধর সাপ কামড়ায় বলে মনে করছেন তাঁরা। বিষয়টি ওর মা বুঝতেও পারেননি। কাউকে ডাকেননি। একপর্যায়ে তিনি (মামা) ওই ঘরে এসে দেখতে পান ভাগনির মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। তবে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতির সময় তন্বী মারা যায়।

তন্বীর পারিবারিক সূত্র জানায়, মেয়েটি মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় বাবা তবিবর রহমান স্ত্রী পপি খাতুনকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন। এ ঘটনা সইতে না পেরে পপি খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সেই থেকে পপি খাতুন মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।

চৌগাছা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, ‘তন্বী অত্যন্ত মেধাবী ছিল। ক্লাসে তার রোল নম্বর ছিল ১। সে খুব নম্রভদ্র ছিল। কখনো ক্লাস ফাঁকি দিত না। ওর ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শিখে মায়ের সেবা ও সুচিকিৎসা করাবে। সে ইচ্ছা আর পূরণ হলো না মেয়েটির।’

চৌগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ বলেন, তাঁর বাড়ির কাছেই তন্বীর নানাবাড়ি। ঘটনা শুনে আজ সকালে তিনি ওই বাড়িতে যান। তন্বীর বাম পায়ের বুড়ো আঙুলের পাশের আঙুলটিতে ক্ষত দেখতে পেয়েছেন। ক্ষতটিকে সাপের কামড় বলেই মনে হয়েছে। আর বাড়িটি এত ঝোপঝাড়ে ঘেরা যে সেখানে সাপ থাকতেই পারে। তিনি বলেন, ‘মা প্রতিবন্ধী, মেয়েটা ছিল বেশ শান্ত স্বভাবের। সবাই মেয়েটিকে ভালোবাসত।’