এপ্রিল-মে মাসে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল-মে মাসে সহিংস ঘটনা কমলেও বেড়েছে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল-মে মাসে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৭৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। ওই সময় নির্যাতনের শিকার হওয়া ২২৫ জনের মধ্যে নিহত হয় ৬ জন এবং আহত হয় ১১৯ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে (পিস রিপোর্ট) এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের সম্পাদক ও জেনোসাইড স্টাডিজ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ করে এই দুই মাসে কেন যৌন নির্যাতন কেন এত বেড়ে গেল তা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যেখানে দেশে দিনে গড়পড়তা এক দশমিক ৫ থেকে ২ শতাংশ সেখানে এই দুই মাসে গড়ে প্রতিদিন চারটি ঘটনা ঘটে।’

দেখা যায় এই বছরের এপ্রিল-মে মাসে সহিংস এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৬০০ টি। এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮১২ জন, আহত হয়েছে ২৫৬৬ জন। এ সময় যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২৫ টি। বন্ধুকযুদ্ধ হয়েছে ১০৫ টি এবং আটক করা হয়েছে ৫১০৪ জনকে। জাতীয় দৈনিক গুলোতে প্রকাশিত সংবাদসমূহ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের তুলনায় সহিংস এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনার সংখ্যার হার এপ্রিল-মে মাসে কমেছে প্রায় ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সহিংস এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২৭৫৭ টি। এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮০০ জন, আহত হয়েছে ৩১৪৫ জন। এ সময় যৌন নির্যাতন ঘটনা ঘটেছে ১১৪ টি। আর বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে ৯১ টি এবং এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ৭১৫৭ জনকে।

ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সহিংস ঘটনার সংখ্যার হার ডিসেম্বর ২০১৮-জানুয়ারী ২০১৯ এর তুলনায় কমেছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ঘটা সহিংস এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৩০৫০টি।

সহিংস এবং সন্ত্রাসী ঘটনার ঘটনাস্থল হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এপ্রিল-মে মাসে ঢাকায় এসব ঘটনায় নিহত হয়েছ ২২৯ জন। এরপরের আবস্থানে রয়েছ চট্টগ্রাম, নিহতের সংখ্যা ২০৮ জন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী, নিহতের সংখ্যা ১১১ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এপ্রিল-মে মাসে যৌন নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াটা শঙ্কাজনক বটে তবে পরবর্তী সময়ে এসে তা আবার কমে এসেছে। আর বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পরিমাণ বেশি হলেও তা ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় কিন্তু কম। নেদারল্যান্ডসে প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি ঘটনা ঘটে। ইউরোপ অনেক দিন ধরে এই ভয়াবহতা কমানোর চেষ্টা করছে। তবে সে ক্ষেত্রে খুব সাফল্য নেই।’

অন্যান্য অপরাধের তুলনায় যৌন নির্যাতন বা সহিংসতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বিগ্ন করছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির পরামর্শক নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারহীনতার কারণেই যৌন সহিংসতা বাড়ছে। অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার একটি সংস্কৃতি চলছে। এর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও একটা কারণ।’

জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের প্রতিবেদনটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া খবরের কারণে ঘটা সহিংস ঘটনাগুলোর ফলাফলও তুলে ধরা হয়।