রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে বসছে চীন

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলেও বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলেও বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে বৈঠকে বসছে চীন। আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর চীন এবার দুই দেশকে নিয়ে আলোচনার পর রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর ওপর জোর দিচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল রোববার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের দুই পাশে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে তিন দেশ আলোচনায় বসবে। 

মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, নিজেদের ইচ্ছায় রাখাইনে ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে মৌলিক সুবিধা নিয়ে জীবনযাপন শুরু করতে পারে, এ বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে। তবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টিকে পূর্বশর্ত হিসেবে সামনে আনা ঠিক হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় এ মাসে প্রথম বৈঠক শেষে পরের ধাপে মিয়ানমারে ত্রিপক্ষীয় কমিটি বৈঠকে বসবে। কমিটি ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তির আলোকে কাজ করবে। আলোচনার একপর্যায়ে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখতে সরেজমিন পরিদর্শনে যাবে ত্রিপক্ষীয় কমিটি। 

ঢাকা ও বেইজিংয়ের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এ সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে অমীমাংসিত থাকলে নিরাপত্তাসহ নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে চীন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। এ জন্য মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি করানোর ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে চীন। 

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ কে আব্দুল মোমেন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী টিন্ট সোয়েকে নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন ও এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অণু বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলওয়ার হোসেনকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ ফেরানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে ব্যাপারে সুপারিশ করবে। এর আলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলেও বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা নিচ্ছে। ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের দেওয়া ৫০ হাজার রোহিঙ্গার সব শেষ তালিকাটিও মিয়ানমার নিয়েছে। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ১ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েছে মিয়ানমার। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনের অধিবাসী বলে স্বীকার করেছে মিয়ানমার। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের কাছে রোহিঙ্গাদের তালিকা পাঠানো হলেও কবে থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এর আগে চীনের সরাসরি মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন শুরুর প্রথম চেষ্টা বিফলে যায়। রোহিঙ্গারা স্পষ্টই জানিয়ে দেয়, মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হলে তারা রাখাইনে ফিরে যাবে না।