কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতাসংকট কাটছে না

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এখনো পার হতে পারেনি। আজ সোমবার বিকেলে তোলা । ছবি: অজয় কুন্ডু
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এখনো পার হতে পারেনি। আজ সোমবার বিকেলে তোলা । ছবি: অজয় কুন্ডু

মাদারীপুরে কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতাসংকট এখনো কাটেনি। নানা প্রতিকূল পরিবেশে ১১টি ফেরি চলাচল করলেও রাতের বেলায় প্রায় সবই বন্ধ থাকে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই নৌপথে আসা যাত্রী ও চালকেরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নৌপথে নাব্যতাসংকট দেখা দেয়। নৌপথে ড্রেজিং কাজ চলমান থাকলেও পদ্মা নদীতে পানি ক্রমেই কমতে থাকে। ফলে নৌপথের চ্যানেল অতিক্রম করতে গিয়ে ব্যাহত হচ্ছিল ফেরি চলাচল। এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে টানা তিন দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। গত শুক্রবার সকাল থেকে কয়েকটি ফেরি স্বল্পসংখ্যক যানবাহন লোড করে পারাপার শুরু করলেও প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। বর্তমানে এই নৌপথে ১৮টি ফেরির বিপরীতে রো রো ৩টি, কে-টাইপ ২টি, মাঝারি ২টি ও ৪টি ডাম্ব ফেরি চলাচল করছে।

আজ সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত কয়েকটি গাড়ি ছাড়া সবই পণ্যবাহী ট্রাক। ফেরিগুলো স্বল্পসংখ্যক যানবাহন লোড নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে ছেড়ে যাচ্ছে। দুই নম্বর ঘাটে একটি ডাম্ব ফেরিতে ১৫টি ট্রাক বহন করার ক্ষমতা থাকলেও এখন তোলা হচ্ছে মাত্র ৪টা পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে ৩টি টার্মিনালে এখনো অন্তত শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো ফেরি ছাড়তে পারছি আবার কখনো ফেরি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। রাতে তো ফেরি ছাড়াটা অসম্ভবই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা ওই সংকীর্ণ চ্যানেল দিয়ে পাশাপাশি দুটি ফেরি চলানো যাবে না। তাই আমরা রাতে ফেরি চলাচল বন্ধই রাখি। আর দিনের বেলায় অধিকাংশ ফেরি চলাচল করলেও সেই ফেরিগুলোতে হাফ লোডেরও কম দিতে হচ্ছে। ফুল লোড দিলে ফেরিগুলো চ্যানেল ঘুরতে গিয়ে ডুবোচরে আটকে যাবে।’

খুলনা থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক বশির কাজী বলেন, ‘১০ দিন হয়ে গেল টার্মিনালে আটকা পড়ে আছি। কবে যে পদ্মা পাড়ি দিব সেই কথা তো রোজই ভাবছি কিন্তু কোনো উপায় দেখছি না। মাল নিয়ে পেছনে ফিরেও যেতে পারছি না। এভাবে আর কত দিন আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হবে তা জানি না।’

ঢাকাগামী যাত্রী কাওসার হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে দুইবার মাদারীপুর থেকে ঢাকা যাই। কিন্তু ১২ মাসই খননযন্ত্র বসিয়ে খননকাজ করে বিআইডব্লিউটিএ। আর যেখান থেকে পলি তোলা হয় তার পাশেই আবার সেই পলি ফেলা হয়। এর কারণে যেখানে পলি সেখানেই থেকে যায়। দায়সারা কাজ করার ফলে মাঝেমধ্যেই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) নাসিরউদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় ঘাটে তেমন কোনো নতুন গাড়ির আটকা নেই। দিনে যেসব ব্যক্তিগত গাড়ি আসে, সেগুলো ফেরিতে উঠতে পারছে। গত দুই দিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ফেরিতে তোলা হয়েছে। এখনো শতাধিক ট্রাক টার্মিনালে আটকে আছে। আশা করছি, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’