প্রাচীন পাথরের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

‘প্রাচীন পাথর’ বাণিজ্যের প্রলোভন দেখিয়ে বগুড়ায় এক চিকিৎসকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গত রোববার এক চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার শহিদুল ইসলাম (৪০) ও আবু তাহের মির্জা (৫০), বগুড়া সদর উপজেলার সরলপুর এলাকার বাসিন্দা মোজাহার আলী (৫০), সাইদুর রহমান (৩২) ও আইয়ুব হোসেন, রজাকপুরের মুকুল হোসেন (৫০) এবং পলাশবাড়ি এলাকার আমিনুর ইসলাম। এঁদের মধ্যে সাইদুর রহমান প্রতারণায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। 

 সাইদুর রহমান যুবলীগের গোকুল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও আইয়ুব হোসেন সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে গোকুল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারণার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতারণার এই ঘটনায় রোববার বগুড়া সদর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বগুড়া ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আলী। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় বগুড়ার শহরের ডক্টরস ক্লিনিক ইউনিট ১-এ তাঁর কক্ষে দেখা করতে আসেন শহিদুল ইসলাম। 

এ সময় তিনি ব্যবসা–সংক্রান্ত লেনদেনের জন্য সাহায্য ও ব্যাংক হিসাবেও লেনদেন করতে চান। প্রথমে তিনি রাজি হননি। পরে মুঠোফোনে আবু তাহের মির্জার সঙ্গে কথা বলেন। আবু তাহের সাক্ষাতে কথা বলতে চান। এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পর শহিদুল আবার তাঁর কক্ষে দেখা করতে আসেন। এ সময় শহিদুলের সঙ্গে ছিলেন মোজাহার ও সাইদুর। তাঁরা প্রাচীন ধাতব পাথরের ব্যবসার জন্য ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতে চান। তাঁরা জানান, ব্যবসার টাকা তাঁর হিসাব নম্বরে লেনদেন হলে কর ও ভ্যাটমুক্ত হয়ে আসবে। 

এজাহারে আরও বলা হয়, কিছুদিন পর আশরাফ আলী ও তাঁর ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক আইনুল হক ঢাকায় আবু তাহের মির্জার সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি এই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন এবং বলেন, ত্রিকোণাকৃতি শক্তি সঞ্চয়কারী একটি প্রাচীন ধাতব পাথর তাঁরা বগুড়া থেকে কিনবেন। এই পাথর আমেরিকার একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করলে কোটি টাকা লাভ হবে। গত ১৫ আগস্ট আবু তাহের মির্জা বগুড়ায় ধাতব পাথর আনেন। আবু তাহের ও তাঁর সহযোগীরা বগুড়া সদরের রজাকপুর ঘনপাড়া এলাকায় মুকুলের বাড়িতে যান। 

কিন্তু আশরাফ আলীকে পাথরটি দেখতে দেওয়া হয় না। পরের দিন তাঁরা জানান, নগদ টাকা না দিলে ধাতব পাথরটি বগুড়া শহরে আনা হবে না। ২২ আগস্ট মুকুলের বাড়িতে গেলে আশরাফের কাছ থেকে ১ কোটি টাকা নেন সাইদুর ও তাঁর সহযোগীরা এবং ধাতব পাথরের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। ঘণ্টাখানেক পর সাইদুর ও তাঁর সহযোগীরা ফিরে এসে চাকু দেখিয়ে বলেন, ‘পাথরের আশা ছেড়ে দে। বাঁচতে হলে আরও ৪ কোটি টাকা দিতে হবে।’ আশরাফের কাছে টাকা ছিল না। তখন ব্যাংকের কয়েকটি চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন, যাতে ৪ কোটি টাকার উল্লেখ করা হয়। 

জেলা ডিবির পরিদর্শক আছলাম আলী বলেন, ধাতব পাথর প্রতারণার ঘটনায় গ্রেপ্তার সবাইকে রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।