শিক্ষকতা ছেড়েই দলের বড় পদ পেলেন তিনি

প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী ও বাবুল মিয়া সরকার
প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী ও বাবুল মিয়া সরকার

নেতা-কর্মীদের অনুমানই সত্যি হলো। শেষ পর্যন্ত সদ্য শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে আসা বাবুল মিয়া সরকারই হলেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত রোববার সন্ধ্যার পর সম্মেলনের মাধ্যমে তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি হয়েছেন প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী।

এটাই তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন। সম্মেলনের আগেই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রায় চূড়ান্ত ছিল বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়।

সম্মেলনের আগে ও পরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল অতিসম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করা বাবুল মিয়া সরকার। স্থানীয় সাংসদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাবুল সরকারের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত থাকায় সম্মেলনের মাত্র ১৯ দিন আগে তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে পদত্যাগ করেন বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান।

২০১৩ সালে ময়মনসিংহের ১৩তম উপজেলা ঘোষণা করা হয় তারাকান্দাকে। এর আগে এটি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত তারাকান্দা ইউনিয়ন ছিল। প্রথমবারের মতো রোববার ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি করা হয়েছে।

তারাকান্দা উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ মাঠে রোববার বিকেলে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাংসদ রুহুল আমিন মাদানী, ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সাংসদ ফাহমী গোলন্দাজ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হকসহ জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। সন্ধ্যার পর কমিটি ঘোষণা করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নতুন এ কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারা প্রত্যেকেই স্থানীয় সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের অনুগত। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি বরাবরই শরীফ আহমেদের অনুগত নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। হাতেগোনা কিছু নেতা এ বলয়ের বাইরে থাকলেও তাঁরা সংগঠিত নন। বাবুল মিয়া সরকার শিক্ষকতা পেশায় থাকাকালেই তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। রাজনৈতিক বিষয়ে বাবুল মিয়া প্রতিমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের লোক বলে পরিচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। সম্মেলনের আগে থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম মানুষ আগাম বলে দিয়েছে। এ কারণে সম্মেলনের মাত্র ১৯ দিন আগে বাবুল মিয়া শিক্ষকতা পেশা ছেড়েছেন। তবে এ নিয়ে কেউ বিরোধিতা করেননি।

বাবুল মিয়ার মুঠোফোন নম্বর গতকাল দুপুরে বন্ধ পাওয়া যায়। তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নিজের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে গত বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি আশির দশকে ছাত্রলীগ করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন মানুষ। নিজের ইচ্ছার চেয়ে মানুষের ইচ্ছায় তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। ১ অক্টোবর তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বাবুল মিয়া সরকার আশির দশকে ছাত্রলীগ করেছেন। শিক্ষকতার পেশায় ঢোকার আগে তিনি আওয়ামী লীগও করেছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীদের ইচ্ছাতেই তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।