চিকিৎসককে মারধরের মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আবদুল কাইয়ুম। তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্থানীয় পলাশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা গতকাল সোমবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটেছে। এ ঘটনার শিকার চিকিৎসকের নাম আখতার উজ জামান আকন্দ। তিনি এ বিষয়ে থানায় আবদুল কাইয়ুম, তাঁর ছেলে সাইদুর রহমান ও অজ্ঞাত আরেকজনকে আসামি করা মামলা করেছেন। চিকিৎসক আখতার উজ জামান বর্তমানে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে পালন করছিলেন আখতার উজ জামান। এ সময় আবদুল কাইয়ুম ও সাইদুর রহমান হাসপাতালে আসেন। কাইয়ুম নিজের সঙ্গে আনা একটি ইনজেকশন দিতে চিকিৎসক আখতারকে বলেন।

আখতার উজ জামান মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আবদুল কাইয়ুমের কাছে ওই ইনজেকশন দেওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থাপত্র ছিল না। ব্যবস্থাপত্র দেখতে চাইলে কাইয়ুম মোবাইলে নামহীন একটি ব্যবস্থাপত্র দেখান। এ জন্য তিনি কাইয়ুমকে বিনয়ের সঙ্গে পাশের কক্ষে নার্সের কাছ থেকে ইনজেকশনটি দিয়ে নিতে বলেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, এ সময় কাইয়ুম পাশের কক্ষ থেকে ওই ইনজেকশন দিয়ে নেন। পরে চিকিৎসক আখতারের কাছে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি ও ছেলে সাইদুর আখতারকে গালাগালি শুরু করেন। বিষয়টি দেখে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের বাধা দিয়ে হাসপাতালের বাইরে যেতে বলেন। তবে হাসপাতাল ত্যাগের কিছুক্ষণ পর কাইয়ুম ও সাইদুর আবার ফিরে আসেন। এবার তাঁরা চিকিৎসক আখতারকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন।

আবদুল কাইয়ুম গতকাল রাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, চিকিৎসককে মারধরে সময় তিনি ছিলেন না। এটা তাঁর ছেলে করেছেন। তবে তাঁর ছেলে ডাক্তারের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, সেটি অন্যায় বলে মন্তব্য করেন কাইয়ুম।

বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, আবদুল কাইয়ুমকে আজ দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর ছেলে সাইদুর রহমানকেও গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় প্রতিবাদ
এদিকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে আজ মানববন্ধনে করা হয়েছে। সেখানে বক্তব্য দেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় ওই চিকিৎসক দুই কানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। আমরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহমান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছরুয়ার আলম ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস প্রমুখ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সুনামগঞ্জ জেলা শাখা। সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি মো. আবদুল হাকিম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত দাস এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।