উপাচার্য মীজানুরের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে আল্টিমেটাম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উপাচার্য মীজানুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঢাকা, ২২ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উপাচার্য মীজানুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঢাকা, ২২ অক্টোবর। ছবি: দীপু মালাকার

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান যুবলীগের দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আগামী রোববারের মধ্যে উপাচার্যের বক্তব্য প্রত্যাহার করে, গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে (আল্টিমেটাম) দেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

সম্প্রতি উপাচার্য মীজানুর রহমান গণমাধ্যমে নিজেকে ‘যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব দিলে তিনি উপাচার্যের পদ ছেড়ে যুবলীগের দায়িত্ব নেবেন’।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি একটি টেলিভিশনে এক টক শোতে কথাপ্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, যুবলীগের দায়িত্ব পেলে তিনি উপাচার্য পদ ছেড়ে দেবেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেও তিনি এখনো যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নম্বর সদস্য। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যদি দায়িত্ব দেন, তাহলে তিনি উপাচার্য পদ ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের পদে দায়িত্ব পালন করবেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী ৮ নম্বর ধারায় অনুয়ায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্ট, প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে থাকবেন। যেখানে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। এই আইনের ৪৪ নম্বর ধারার চার নম্বর উপধারায় উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। কিন্তু উপাচার্য এ আইনের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বক্তব্য দেন যে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন না। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নন। তিনি এখানকার নিয়োগকর্তা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে রাজনীতি করার নিয়ম আছে।

মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, উপাচার্য এ আইন লঙ্ঘন করেই রাজনৈতিক পদ ধরে রেখেছেন। তাই তাঁর এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর তৌফিক মাহমুদ বলেন, ‘উপাচার্য এর আগেও একাধিকবার বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় করা ঠিক হয়নি। আমরা বলব, তাঁকে উপাচার্য করা ঠিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর আবেগ ও ভালোবাসা নেই। তিনি এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষক বানাতে।’

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দাবি তোলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে যাঁরা মর্যাদা দেবেন, মনেপ্রাণে ধারণ করবেন—বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন শিক্ষককে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে।

এ বিষয়ে উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে কেউ কোনো দাবি জানাতে আসেনি। যে আলোচনাগুলো করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ কাগজ ও সময় নষ্ট করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’