ক্যাসিনো-কাণ্ড: আ.লীগের দুই নেতার ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া
এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এবং তাঁর ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই এই দুজনের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার কমিশনের সভায় দুটি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাল বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১–এ মামলা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র বলছে, এনামুল হক বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁকে অবৈধ অর্থ অর্জনে সহায়তা করেছেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদ। তাই এই তিনজনকে একটি মামলায় আসামি করা হচ্ছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, এনামুলের আয়কর নথি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এনামুলের বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর আয়ের সঙ্গে এসব সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি অবৈধ আয়ের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে। সেসব তথ্য মামলার তদন্তকালে আইন-আমলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অনুসন্ধান দল।

অন্যদিকে, এনামুলের ভাই রূপন ভূইয়ার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৪ কোটি। তাঁরও বৈধ কোনো আয়ের উৎস খুঁজে পায়নি দুদক।

চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক ও তাঁর ভাই থানা রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে টাকা ও গয়না জব্দ করার পর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৪ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে র‍্যাব।

অভিযান শেষে র‍্যাব জানিয়েছিল, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর টাকা এনে এনামুল বাসায় রাখতেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জায়গাও হতো না। তাই টাকা দিয়ে তিনি স্বর্ণালংকার কিনতেন।

অভিযান শেষ হওয়ার প্রায় এক মাসের মধ্যেও এঁদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। সূত্রাপুর থানায় মানি লন্ডারিং ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি করে চারটি মামলা করে র‍্যাব। ওয়ারী থানায় দুটি অস্ত্র আইনে এবং গেন্ডারিয়ার থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়।

ওয়ারী থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় বলা হয়, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে র‍্যাব জানতে পারে, ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের অবৈধ ক্যাসিনোর অংশীদার এনামুল হকের অর্থ বিশ্বস্ত কর্মচারী আবুল কালাম ও হারুন অর রশীদের বাসায় আছে। র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা, আগ্নেয়াস্ত্র ও টাকা উদ্ধার করে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে।

ক্যাসিনো–কাণ্ডে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গতকাল সোমবার দুটি মামলা করে দুদক। জি কে শামীম ও খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো–কাণ্ডে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই–বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে গতকাল দুটি মামলা করছে সংস্থাটি। আজ দুটি মামলার অনুমোদন হয়েছে।

দুদকের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, শুরুতে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হলেও তালিকা এখন অনেক বড়। এটা এখন ১০০ জনের মতো দাঁড়িয়েছে। যুবলীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ওই তালিকায় আছেন কি না, তা জানতে চাইলে সূত্রটি জানিয়েছে, ক্যাসিনো–কাণ্ডে যাঁদেরই নাম এসেছে, সবাই অনুসন্ধানের আওতায় আসবেন। রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মচারী, যাঁরা জড়িত, তাঁদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।