যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা

যুবলীগের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চয়ন ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
যুবলীগের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চয়ন ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করেছে যুবলীগ। প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। মহানগরের বিতর্কিত নেতাদের মহড়ায় ছিল শক্তি প্রদর্শন। সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা বিশৃঙ্খলা থামাতে পারেননি। এ সময় নেতারা বলতে থাকেন, আগে চেয়ারম্যানের (ওমর ফারুকের) গালি শুনে সবাই বের হতো। তাই গালি ছাড়া এখন আর কাজ হয় না।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।

দুপুরের পর থেকেই নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন যুবলীগ কার্যালয় ও তার সামনের রাস্তায়। কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের নেতারা। মহানগর কমিটির নামে স্লোগান চলছিল একটু পরপর। এ সময় প্রথম আলোকে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, অভিযান শুরুর পর গত এক মাস যুবলীগ কার্যালয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দেখা যায়নি। এখন আবার তাঁরা ভিড় করছেন।

নেতা-কর্মীদের চাপে সংবাদকর্মীদের জায়গা হচ্ছিল না কার্যালয়ের ভেতরে। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. ফারুক হোসেন বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কমিটি করার পর আমরা থাকব না। কিন্তু কমিটি গঠনের সময় তো থাকব। সবার ছবি তুলে রাখব।’ ছবি তোলার জন্য মোবাইলও বের করেন। আরও কয়েকজন নেতা সবাইকে বের হওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

যুবলীগের কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ায় শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। সভাপতিমণ্ডলীর একজন ছাড়া আর সবাই নিশ্চিতভাবেই যুবলীগ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তাই তাঁদের কথা কেউ শুনছে না। গত রোববার গণভবনে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৫৫ বছরের বয়সসীমা বেঁধে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীরা সেখানে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, স্লোগান দেন। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীরা সেখানে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, স্লোগান দেন। ছবি: প্রথম আলো

বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কার্যালয়ে ঢোকেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম ও সদস্যসচিব হারুনুর রশীদ। যুবলীগের জাতীয় সম্মেলনের জন্য তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দুজন ঢোকার সময় মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে ঢুকে পড়েন নেতা-কর্মীরা। তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে। দক্ষিণের নেতা-কর্মীরাও ঢুকে পড়েন ওই সময়। একজন কেন্দ্রীয় নেতা মহানগরের সবাইকে বের হওয়ার কথা বলেন। এর উত্তরে পেছন থেকে একজন বলে ওঠেন, ‘মহানগরের কাউকে বের করা হলে সবাইকে বের করে দেব।’ এসব বিশৃঙ্খলার মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় এক নেতা প্রথম আলোকে অভিযোগ করেন, আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ঢাকা মহানগরের নেতাদের নিয়ে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। এমন পরিস্থিতি দেখে তো আবারও শঙ্কা হচ্ছে।

পরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগরের নেতা-কর্মীদের আলাদা করে ধন্যবাদ জানান চয়ন ইসলাম। ২৩ নভেম্বর জাতীয় সম্মেলন সফল করাকে মূল চ্যালেঞ্জ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাদক, দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও অন্য সব অপকর্মকারীর বিষয়ে “জিরো টলারেন্স”। অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আগামী জাতীয় সম্মেলনে আমরা তাদের সঙ্গে নেই।’ সম্মেলন সফল করতে যুবলীগ ঐক্যবদ্ধ আছে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে চয়ন ইসলাম বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগে যুবলীগের কোথাও কোনো কমিটি হবে না। নতুন নেতৃত্ব এসে সব কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এটাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যমান কমিটির মাধ্যমেই জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্ব ঠিক হবে। যুবলীগ নিয়ন্ত্রণ করেন প্রধানমন্ত্রী, তিনিই নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।


সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে চয়ন ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যেই কয়েকটি উপকমিটির খসড়া করা হয়েছে। আরও প্রস্তুতির কাজ চলছে। মাত্র এক মাস এক দিন সময় পাওয়া গেছে। এর মধ্যেই সম্মেলন সফল করতে সবার সহযোগিতা লাগবে। নেতা-কর্মীদের দৃঢ়চেতা মনোভাব থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। যুবলীগের আজকের সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।