ছাত্রী হোস্টেলে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে রাতের বেলা ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

সাময়িক বহিষ্কার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন হোস্টেলের মেট্রোন নাসরিন আকতার, নৈশপ্রহরী আবদুস সালাম ও রাঁধুনি রাজিয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

নিরাপত্তার কারণে পরিচয় গোপন রেখে হোস্টেলের এক ছাত্রী জানান, গত রোববার রাত সাড়ে আটটার পর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বি কয়েকজন কর্মী নিয়ে হোস্টেলে ঢোকেন। পরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এসে ছাত্রলীগ নেতাদের হোস্টেল চত্বর থেকে বের করে নিয়ে যায়।

কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন ‘ওই দিন আমাদের কিছু কর্মী পিকনিকের ব্যবস্থা করেছিল। পিকনিকের রান্না করে দিয়েছিলেন ছাত্রী হোস্টেলের রাঁধুনি। তবে আমরা কেউ হোস্টেলে ঢুকিনি। খাবার নিয়ে এসে বাইরে খেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সামনে কলেজ সংসদ নির্বাচনে আমি একজন প্রার্থী। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য এই ষড়যন্ত্রমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।’

হোস্টেল সুপার উম্মে কুলসুম নাসরিন বলেন, সন্ধ্যায় হোস্টেলের বাইরে থেকে কিছু ছেলে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছিল। বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানালে তিনি পুলিশকে খবর দেন। নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যা ছয়টার পর হোস্টেলের কোনো শিক্ষার্থীও ঢুকতে বা বেরোতে পারে না। আর বহিরাগত ঢোকার প্রশ্নই ওঠে না।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার কলেজ অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছেন হোস্টেলের ছাত্রীরা। এ সময় ছাত্রীদের পক্ষ থেকে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হয়। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো অভিযোগ করেননি। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা যে আগেও হোস্টেলে অবাধে প্রবেশ করেছেন, সেই বিষয়ে অধ্যক্ষকে তাঁরা অবহিত করেন।

সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন হোস্টেলের বাইরে কিছু ছেলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে। জানা মাত্র পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তবে ওই দিন ছাত্রলীগের ছেলেরা যে পিকনিক করছিল, এটা আমরা পরে জানতে পেরেছি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে হোস্টেল ভবনে কেউ প্রবেশ করেনি।’

অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, কলেজ ছাত্রলীগের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটির সত্যতা নেই। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। তাতে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, ‘অধ্যক্ষের ফোন পেয়ে আমরা কলেজে ক্যাম্পাসে যাই। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মী হোস্টেলের বাইরে ছিল। দুই থেকে তিনজন খাবার আনতে ছাত্রী হোস্টেলের ভেতরে গিয়েছিল। পরে তাদের হোস্টেলের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’