ইলিশ শিকারে শিশুদের ব্যবহার

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মায় চলছে ইলিশ শিকার। জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে জেলেরা ব্যবহার করছেন শিশুদের। সোমবার বিকেলে শরীয়তপুরের জাজিরার কাজিয়ারচরে।  সত্যজিৎ ঘোষ
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পদ্মায় চলছে ইলিশ শিকার। জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে জেলেরা ব্যবহার করছেন শিশুদের। সোমবার বিকেলে শরীয়তপুরের জাজিরার কাজিয়ারচরে। সত্যজিৎ ঘোষ

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ শিকারে নতুন পন্থা নিয়েছেন অসাধু জেলেরা। জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে ইলিশ শিকারে এখন শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বয়সের বিবেচনা করে শিশুদের দণ্ড দেওয়া হয় না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক জেলে ইলিশ শিকারে নদীতে নামিয়েছেন শিশুদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের প্রত্যেক অভিযানে জেলেদের সঙ্গে শিশুদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু দণ্ড দিতে না পারায় পরবর্তী সময়ে এই শিশুদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০৯টি অভিযান চালিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে ৮৭টি। ৯৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২৫০ জনকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশ শিকার, বিপণন, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই শরীয়তপুরের ৬৯ কিলোমিটার পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকার অব্যাহত রয়েছে। এতে নিধন হচ্ছে মা ইলিশ।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে জাজিরা উপজেলার পৈলান মোল্যাকান্দি এলাকায় পদ্মা নদীতে দেখা যায়, স্থানীয় তিন শিশু একটি নৌকা নিয়ে নদীতে ইলিশ মাছ শিকার করছে। ওই তিন শিশুকে তীরে ডেকে জানা গেল, একজন উপজেলার পাইনপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র উজ্জ্বল খান (১১), পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শরীফ বয়াতি (১২) ও পূর্বনাওডোবা পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাজুল ইসলাম (১৩)। কেন তারা মাছ শিকার করছে, জানতে চাইলে তারা জানায়, তাদের আত্মীয় আলম খাঁরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন তাদের নৌকা ও জাল দিয়েছেন। যা মাছ পাওয়া যাবে, তার অর্ধেক দেলোয়ার আর অর্ধেক ওই তিন শিশু পাবে। এভাবে তারা এক সপ্তাহ ধরে নদীতে মাছ শিকার করছে। এই এক সপ্তাহ ধরে তারা স্কুলে যাচ্ছে না। তারা শিশু, এ কারণে প্রশাসনের লোক তাদের কিছু বলে না।

নৌকার মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করেন।

তাঁর একটি ইঞ্জিন ছাড়া ছোট নৌকা নদীর তীরে বেকার পড়ে ছিল। তাই নৌকাটি তিনি ওই শিশু তিনটিকে দিয়েছেন। ওদের দিয়ে মাছ শিকার করলে আটক হওয়ার বা জরিমানা দেওয়ার ঝামেলা থাকে না। শিশু বিবেচনায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

জাজিরার কাজীয়ারচর এলাকায় আরও দুই শিশুকে পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। একজনের নাম দেলোয়ার হোসেন (১৪) ও অন্যজনের নাম মোবারক হোসেন (১২)। তাদের বাড়ি নড়িয়ার নওপাড়া এলাকায়। তারা জানায়, পরিবারের বড়দের সঙ্গে নদীতে ইলিশ মাছ শিকার করতে এসেছে।

দেলোয়ার ও মোবারক জানায়, তারা কখনো নদীতে মাছ শিকার করে না। ইলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর তাদের এক চাচা তাদের নদীতে নিয়ে এসেছেন। প্রথম দুই দিন তাদের মাছ ধরার কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। এখন একাই তারা জাল ফেলে মাছ তুলতে পারে। এ সময় পুলিশ এলে নৌকায় তাদের রেখে বড়রা পালায়। পুলিশ শিশু দেখে তাদের কিছু বলে না।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘ভেদরগঞ্জে যতগুলো অভিযান চালিয়েছি, প্রত্যেক অভিযানে বড় জেলেদের সঙ্গে শিশুদের আটক করা হয়েছে। বয়সের বিবেচনায় শিশুদের কারাদণ্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু জেলে ইলিশ শিকারে শিশুদের নদীতে নামাচ্ছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, ‘গত ১২ দিনে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ১ হাজার ১০০ জেলেকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থানে শিশুরাও মাছ শিকার করছে। তারা আটক হলে পরে অভিভাবককে ডেকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।