নদ দখল করে যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে মাছ চাষ

ভৈরব নদের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ছবি: মাসুদ আলম
ভৈরব নদের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ছবি: মাসুদ আলম

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব নদের ১২ কিলোমিটার অংশে খননকাজ শেষ হয়েছে প্রায় চার মাস আগে। এর মধ্যে নদের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এ মাছ চাষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ওহিদুল ইসলাম। তাঁকে সহায়তা করছেন তাঁর অন্য চার ভাই।

ওহিদুল ইসলাম হাকিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক আহ্বায়ক। বর্তমানে ইউনিয়নটিতে যুবলীগের কমিটি নেই। নতুন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি উপজেলার এবিসিডি কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক। তাঁর বড় ভাই শহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওহিদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম।

ওহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, আমরা তো কোনো মাছ চাষ করছি না। আমাদের এদিকে কোনো ঝামেলা নেই। আপনাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এখানে দলীয় গ্রুপিং আছে। তাঁরা ঝুটঝামেলা বাধানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। জাল টানলে তো বোঝা যাবে। দুই পাশে তো কালভার্ট রয়েছে। মাছ চাষ করলে বাঁধ দিতে হবে। নদে মাছ চাষ হচ্ছে না। নদ উন্মুক্ত আছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ চলমান। প্রকল্পের আওতায় চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর থেকে যশোর সদর উপজেলার আফ্রা পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হবে। ইতিমধ্যে চৌগাছা অংশের নদের ১২ কিলোমিটার খননকাজ শেষ হয়েছে। নদের চৌগাছা বাজারসংলগ্ন অংশে সরকারিভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

চৌগাছা অংশে ভৈরব নদের ওপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ১৬টি সেতু ও কালভার্ট রয়েছে। সেতু ও কালভার্টের অংশে নদ খনন করা হয়নি। এতে নদে এখনো স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ শুরু হয়নি। নদের ওই অংশগুলোতে বাঁধ হয়ে আছে। নদের হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর বুড়ি বটতলা কালভার্ট থেকে লক্ষ্মীপাশা কালভার্ট পর্যন্ত ৪৫০ মিটার এলাকায় প্রায় চার মাস ধরে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প ও তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হচ্ছে। এর আগে বুড়ি বটতলা কালভার্ট থেকে লক্ষ্মীপাশা কালভার্ট পর্যন্ত নদের পানিতে ও দুই পাড়ে আগাছানাশক দিয়ে শেওলা, কচুরিপানা ও ঘাস মারা হয়েছে।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তাহেরপুর রিসোর্ট থেকে ভৈরব দক্ষিণমুখী হয়েছে। তাহেরপুর রিসোর্ট সেতু থেকে প্রায় ৯০০ মিটার দূরে নদের ওপর বুড়ি বটতলা কালভার্ট। সেখান থেকে ৪৫০ মিটার দক্ষিণে লক্ষ্মীপাশা কালভার্ট। দুই কালভার্টের অংশে নদ খনন না করায় বাঁধের মতো হয়ে আছে। নদের ওই অংশে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

নদের পাশে সবজিখেত পরিচর্যা করছিলেন তাহেরপুর গ্রামের আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘নদে মাছ চাষ করছেন ওহিদুল ইসলাম ও তাঁর ভাইয়েরা। গ্রামের লোকজনও আছেন তাঁদের সঙ্গে। এ জন্য কাউকে নদের ওই অংশে নামতে দেওয়া হয় না। যে মাছ ছাড়া হয়েছে, তার ওজন প্রায় ৪০০-৫০০ গ্রাম হয়ে গেছে।’

আরাজি সুলতানপুর গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রামের ওহিদুল ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে নদে মাছ চাষ করছেন। শুনেছি গ্রামের প্রায় সবাই মাছ চাষের সঙ্গে আছেন। তাঁরা এক থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে শেয়ার কিনেছেন। তবে আমি কোনো শেয়ার কিনিনি।’

হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর (আরাজি সুলতানপুর-দেবীপুর) ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, এক পার্টি নদে মাছ ছেড়ে দিয়েছে। প্রায় চার মাস আগে নদ খননের পর গ্রামের ওহিদুল প্রথম নদে মাছ ছাড়েন। এতে গ্রামের লোকজন গ্যাঞ্জাম শুরু করেন। পরে গ্রামের লোক শেয়ার হয়েছেন। গ্রামের বেশির ভাগ লোক আছেন মাছ চাষে। সারা দেশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছে সরকার। সেখানে এঁরা কীভাবে নদে মাছ চাষ করেন?

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদের জায়গা দখল করে মাছ চাষের কোনো সুযোগ নেই। সরেজমিনে দেখে সেই রকম কিছু হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘নদ দখল করে মাছ চাষের বিষয়টি শুনেছি। কোনোভাবেই নদ দখল করে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না। কালভার্টের ওই অংশ দ্রুত কেটে দেওয়া হবে।’