জনগণের অর্থে আনা বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান হোন: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

বিমান উড্ডয়নকে একটি উচ্চতর কারিগরি পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ উড্ডয়ন এবং এয়ারক্রাফটের রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে সংগৃহীত এই মূল্যবান বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে যত্নবান হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষষ্ঠ ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেফটি সেমিনারে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান হয়।

বিমান উড্ডয়নে পেশাগত দক্ষতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ দক্ষতা একদিকে যেমন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, তেমনি সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্যও বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা।
তাঁর সরকারের এভিয়েশন সেক্টরের মানোন্নয়নে গৃহীত বিশেষ পদক্ষেপের ফলে এ অঞ্চলের বিমানবাহিনী এবং বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট সেফটি রেকর্ড অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এভিয়েশন সেক্টরের মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে আমাদের বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট সেফটি রেকর্ড অত্যন্ত সন্তোষজনক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমাদের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইসিএও) ফ্লাইট সেফটি সমীক্ষায় ঈর্ষণীয় ৭৫ দশমিক ৪৬ ভাগ নম্বর অর্জন করেছে, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সম্প্রতি নিরাপদ উড্ডয়নের মানদণ্ডে পাঁচ তারকার আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক এভিয়েশন সেফটি অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির টেকনিক্যাল রিভিউয়ে ক্যাটাগরি-১ ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই সেমিনারের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘টিম এফোর্ট ক্যান ইনশিউর টিম সেফটি’।

যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, মিসর, ওমান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশসহ চারটি মহাদেশের ১৬টি দেশের বিমানবাহিনীর সদস্য ও আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (আইসিএও) প্রতিনিধিরা এবারের সেমিনারে অংশ নেন।

বিগত দুই দিন এখানে বিমান দুর্ঘটনা প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নয়নে দেশি-বিদেশি সামরিক-অসামরিক সব সংস্থার মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি নিরাপদ উড্ডয়নসংক্রান্ত নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ মাফিদুর রহমান এবং ফ্লাইট সেফটি বিভাগের পরিচালক এয়ার কমোডর মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখেন।

বিমান ভ্রমণ আরও নিরাপদ, আরামদায়ক ও সহজতর করতে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যেটি বাস্তবায়িত হলে এখনকার চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি অর্থাৎ বছরে প্রায় ১২ মিলিয়নের বেশি বিমান যাত্রীকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই বিমান ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের কাজে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার স্থাপন করেছি। নিকট ভবিষ্যতে এ সেন্টারে যুদ্ধবিমানসহ বর্তমানে ব্যবহৃত বেসামরিক বিমানও মেরামত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবাহিনীতে ‘স্টেট অব দ্য আর্ট ৩ডি হেলিকপ্টার’ সিমুলেটর স্থাপন করা হয়েছে, যা থেকে আমাদের পাইলটরা ‘রিয়েল টাইম’ ফ্লাইংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রতিষ্ঠা এবং এর একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী করে বিমানবাহিনী গড়ে তোলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠিত হয়। তখন বিমানবাহিনীর পাইলট ছাড়াও অনেক বেসামরিক পাইলট ‘কিলো ফ্লাইট’ ইউনিটে যোগদান করে স্বাধীনতাযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।