'হত্যা মামলার আসামিকে বাঁচাতে কৌশল'

শাহাদাত হোসেন
শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রামে শাহাদাত হোসেন মৃধা নামের এক ব্যক্তিগত গাড়িচালককে খুনের মামলায় নিহতের  ভাইকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে এক কিশোরকে আসামি করে দোষীপত্র দেওয়া হয়। ১৪ অক্টোবর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা-পুলিশ এগুলো আদালতে জমা দেয়।

পুলিশ বলছে, ওই কিশোরকে ছুরি দিয়েছিল নিহত ব্যক্তির ভাই। নিহত ব্যক্তির পরিবার বলছে, প্রধান আসামিকে বাঁচাতে পুলিশ শাহাদাতের ভাইকে আসামি করেছে। একইসঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও আসামিকে কিশোর বলে উল্লেখ করেছে। তাই পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবেন মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুল হালিম মৃধা। তিনি বলেন, আসামিকে বাঁচাতে পুলিশ কৌশল করেছে।চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সকালে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার হিলভিউ রোড এলাকায় একটি পুরোনো টেলিভিশনে লাথি মারাকে কেন্দ্র করে শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে স্থানীয় ফাতেমা রহমানের ছেলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর শাহাদাতকে একা পেয়ে ছুরিকাঘাতে খুন করে পালিয়ে যায় ফাতেমার ছেলে।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন শাহাদাতকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুল হালিম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় ফাতেমার ছেলেকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। 

ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোহাম্মদ নাসিম হোসেন। তদন্ত শেষে তিনি আদালতে ফাতেমার ছেলেকে আসামি করে একটি দোষীপত্র এবং নিহত ব্যক্তির ভাই অহিদুল ইসলামকে আসামি করে পৃথক অভিযোগপত্র জমা দেন। 

দোষীপত্রে বলা হয়, মামলার এজাহারে আসামির বয়স ১৯ বলা হলেও জন্মনিবন্ধন, স্কুল সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৭। টেলিভিশনে লাথি মারাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটির জেরে শাহাদাতকে ছুরিকাঘাতে খুন করে ওই কিশোর। গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও তা স্বীকার করেছে। আসামি বর্তমানে কারাগারে আছে। 

>গাড়িচালক শাহাদাত হত্যা
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন মামলার বাদী


অহিদুল ইসলামকে আসামি করে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, শাহাদাতের সঙ্গে কিশোরের কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে অহিদুলের কাছে গেলে তিনি কিশোরকে একটি ছুরি দেন। শাহাদাতকে মারতে বলেন। এ জন্য অহিদুলকে আসামি করা হয়। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন। 

মামলার বাদী ও নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুল হালিম দাবি করেন, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা থেকে বাঁচতে তার আরেক ছেলেকে পুলিশকে দিয়ে আসামি করেছে। ভাইকে হত্যার জন্য কোনো ছুরি দেননি অহিদুল। এ ছাড়া ঘটনার পরপর অহিদুল তাঁর বাবাকে হত্যার খবর দেন। মিথ্যা মামলায় তাঁর আরেক মেয়েকে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ছেলে হত্যার বিচার চাওয়ায় একের পর মামলায় জড়ানো হয়েছে তাঁর ছেলেমেয়েদের। 

পেশায় লেপ–তোশকের দোকানদার আবদুল হালিম বলেন, আসামির বয়স ১৯ হলেও কীভাবে ১৭ বলছে পুলিশ তিনি বুঝতে পারছেন না। তাই নিজের ছেলেকে আসামি করা ও আসামির বয়স কমিয়ে কিশোর করায় আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করবেন। আগামী ২৪ নভেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। 

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামী থানার পরিদর্শক গোলাম মোহাম্মদ নাসিম হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আসামির স্বীকারোক্তি ও তদন্তে উঠে আসায় নিহত ব্যক্তির ভাইকে আসামি করা হয়েছে। সনদ অনুযায়ী আসামিকে কিশোর বলা হয়েছে।