চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে তিন মাস পর সরাসরি বাস চলাচল শুরু

টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মেহেরপুর জেলার সব যানবাহনও চলাচল করছে।

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ এবং দুই জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের যৌথসভায় দীর্ঘদিনের বিরোধের নিষ্পত্তি ও বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা মেহেরপুর সার্কিট হাউসে ওই যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক আতাউল গনির সভাপতিত্বে সভায় মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করেন।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. সালাউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এ নাসির জোয়ার্দ্দার, জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হাসান জোয়ার্দ্দার, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডল এবং মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল, জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব ও সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানসহ দুই জেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রিপ-সময় নিয়ে দুই জেলার পরিবহন মালিকদের দ্বন্দ্বে গত ২৫ জুলাই থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে মেহেরপুরের দরবেশপুর পর্যন্ত চলাচল করছিল। ফলে ওই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের প্রায় তিন মাস ধরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

২৫ জুলাইয়ের আগের অবস্থায় বাস চলাচলের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্মসূচি দিয়ে আসছিল। ৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় প্রশাসনকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়। অন্যথায় ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জেলার সব কটি পথে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেওয়া হয়। সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট স্থগিত করে।

এরপর গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে পরের দিন ২ অক্টোবর সকাল থেকে মেহেরপুর জেলার দূরপাল্লার বাসগুলো চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলতে দেবে না। সংকট মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ২ অক্টোবর বিকেলে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) বিশেষ সভা আহ্বান করেন। জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকারের সভাপতিত্বে সভায় দুই জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক মেহেরপুরের মালিক-শ্রমিকদের ২৫ জুলাইয়ের আগের অবস্থায় বাস চলাচল চালানোর আহ্বান জানান। উভয় পক্ষের মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তা মেনেও নেন। তবে মেহেরপুরের পক্ষে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে প্রথমে ৮ অক্টোবর ও পরবর্তীতে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর পথে সরাসরি বাস চলাচল শুরু না হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা কঠোর অবস্থানে যান। গত সোমবার সকাল থেকে মেহেরপুর জেলার অ্যাম্বুলেন্স ও ট্যাংকলরি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি শুক্রবারের ওই যৌথসভার উদ্যোগ নেন। মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের গাড়ি চালানোর জন্য বলা হয় এবং তাঁরা তা বাস্তবায়ন করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক এ নাসির জোয়ার্দ্দার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির পক্ষের কারও বক্তব্য জানা যায়নি।