পাবনার ক্লিনিকগুলো যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ

খালের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক। চারপাশে পানি। চলাচলের জন্য নেই কোনো স্থায়ী সড়ক। কাজ চালাতে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সেই পথ পাড়ি দিয়ে ক্লিনিকে পৌঁছাতে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। পাবনার ভাঙ্গুড়ার হাটগ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
খালের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক। চারপাশে পানি। চলাচলের জন্য নেই কোনো স্থায়ী সড়ক। কাজ চালাতে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সেই পথ পাড়ি দিয়ে ক্লিনিকে পৌঁছাতে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। পাবনার ভাঙ্গুড়ার হাটগ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

চারপাশে খাল আর ফসলের খেত। মধ্যে উঁচু পিলারের (স্তম্ভ) ওপর দাঁড়িয়ে আছে একতলা ভবন। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার হাটগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিক এটি। বর্ষায় যখন পানিতে খাল আর ফসলি খেত থই থই করে, তখন ক্লিনিকটিকে মনে হয় যেন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যেটির আশপাশে কোথাও কেউ নেই।

আশপাশের গ্রাম থেকে ক্লিনিকটিতে যাওয়ার জন্য নেই কোনো সড়ক। উপায় না দেখে স্থানীয় লোকজনই বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছেন সরু সাঁকো। বয়স্ক কোনো রোগীকে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় নারী ও শিশুদের।

হাটগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো ভাঙ্গুড়া উপজেলাতেই আরও দুটি ক্লিনিক আছে, যেগুলোর অবস্থাও একই রকম। ভাঙ্গুড়ার দিশপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান ও একই ইউনিয়নের কাজীটোলা গ্রামে। হাটগ্রাম ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য বাঁশের সাঁকো থাকলেও বেতুয়ান ও কাজীটোলা ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য কোনো পথ নেই। রোগীদের ক্লিনিকে যেতে হয় বিলের পানি আর কাদা মাড়িয়ে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ২০১৪ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নির্মাণ করা হয়। জমি দান করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। ভালো জমি না মেলায় তড়িঘড়ি করে পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত জমিতে ক্লিনিকগুলো তৈরি করা হয়। ফলে শুরু থেকেই ক্লিনিকে সেবা নিতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

গত বৃহস্পতিবার তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, কোনোটি ফাঁকা মাঠে আবার কোনোটি পানিতে। বেতুয়ান ও কাজীটোলা কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের মাঠে। হাটগ্রাম ক্লিনিকের ভেতরে দেখা যায়, বারান্দায় জমে আছে কাদা আর পানি। কক্ষের ভেতরে আলমারিতে রাখা ওষুধ। একজন চিকিৎসককে দেখা গেল রোগীদের সমস্যা শুনে ব্যবস্থাপত্র দিতে।

হাটগ্রাম, বেতুয়ান ও কাজীটোলা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামগুলো চলনবিল বিস্তৃত। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও মৎস্যজীবী। বিলের নিচু এলাকা হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় গ্রামগুলো পানিতে ডুবে থাকে। আশপাশে ভালো কোনো স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রও নেই। তাই নির্ভর করতে হয় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ওপর।

হাটগ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী জানান, শুষ্ক মৌসুমেও ক্লিনিকে যেতে কাদা মাড়াতে হয়। বর্ষা মৌসুমে তো কোনো কথাই নেই। চারদিকে শুধু পানি। তাতে দুর্ভোগও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বেশ কয়েকবার জানালেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বেতুয়ান গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, ক্লিনিকে প্রাথমিক সেবা ও বিনা মূল্যে ওষুধ মেলে। চিকিৎসকেরাও আসেন। কিন্তু রাস্তার অভাবে রোগীরা ক্লিনিকে যেতে পারেন না। খেতের মধ্যে দিয়ে চলাচল করলে খেতের মালিকেরা বাধা দেন।

যোগাযোগ করা হলে মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে পাবনার সিভিল সার্জন মেহেদি ইকবাল বলেন, চলাচলের রাস্তা না থাকলে দুর্ভোগ হবে এটাই স্বাভাবিক। সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তাঁরা রাস্তা করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’