জাবিতে নতুন মঞ্চ করে লাগাতার আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ’ নামে নতুন মঞ্চ বানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাদের অবরোধের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা কেউই কার্যালয়ে যাননি।

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রায় দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে তাদের এ আন্দোলন শুরু হয়। দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিলেও আর্থিক অনিয়মের তদন্তের দাবির বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের মশাল মিছিল কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্র ও স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর চলমান আন্দোলনে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আন্দোলনের সঙ্গে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘ফারজানা ইসলামের দুর্নীতি ঢাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে পথ বেছে নিয়েছে তা হলো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বিষয়। যেকোনো আন্দোলন দমানো বা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কাউকে দমাতে চাইলে তাকে শিবির বলা বা স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দেওয়া হলো ক্ষমতাসীনদের পুরোনো অপকৌশল।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্র মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন, তাঁকে ধরে শিবির বানানো হলো। সাবেক কোনো ছাত্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাজনের যোগাযোগ থাকতেই পারে, কিন্তু এর দ্বারা প্রমাণ হয় না যে আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন। এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোটসহ বামপন্থী, আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সমন্বয়ে। এই সর্বদলীয় সংগঠনের মতামতের ভিত্তিতে আন্দোলন চলছে।’

ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন অবরোধ চলবে। অবরোধ শেষে আমরা মিটিংয়ে বসব। পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করে গণমাধ্যমকে জানাব। তবে আন্দোলনের সঙ্গে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হচ্ছে। যদি কেউ আসলেই শিবিরের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁকে আমরা এই আন্দোলনে রাখব না। শিবিরের কোনো এজেন্ডা এই আন্দোলনে থেকে বাস্তবায়ন করতে দেব না। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ান, তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব।’