নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যে কেউ ক্ষুব্ধ হলে দুঃখিত মেনন

রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি
রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যের কারণে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়ে থাকলে এবং এ বিষয়ে কেউ ক্ষুব্ধ হলে, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যার চিঠি ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় নাসিমের ধানমন্ডির বাসায় ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনার পর জোটের অবস্থান তুলে ধরবেন মোহাম্মদ নাসিম।

আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের শরিক ও ওয়ার্কার্স পার্টির সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। রাশেদ খান মেননের ব্যাখ্যার চিঠি পৌঁছে দেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেই রাশেদ খান মেনন জবাব দিয়েছেন। সেটিও মোহাম্মদ নাসিমের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

১৯ অক্টোবর বরিশালের অশ্বিনীকুমার টাউন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সম্মেলনে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এর বড় সাক্ষী আমি নিজেই। আজ মানুষ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত।’

>জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ১৪ দলের কারণ দর্শানো চিঠির জবাব দিয়েছেন রাশেদ খান মেনন।

মেননের এ বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা হয়। ২৪ অক্টোবর ১৪-দলীয় জোট বৈঠক করে রাশেদ খান মেননকে তাঁর বক্তব্যের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির কাউকে ডাকা হয়নি। শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদকেও বৈঠকে ডাকা হয়নি। তবে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মোহাম্মদ নাসিম ফোন করে শরীফ নূরুল আম্বিয়ার সম্মতি প্রত্যাশা করেন। কমিউনিস্ট কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও কেউ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। মোহাম্মদ নাসিম পরে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খানকে ফোন করে তাঁর সমর্থন নেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সূত্র জানায়, রাশেদ খান মেনন তাঁর ব্যাখ্যায় ছয়টি বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বরিশালে তাঁর দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে জাতীয় ও ১৪ দলের রাজনীতিতে ভুল বার্তা গেছে। ওই বক্তব্য সম্পূর্ণ উপস্থাপন না করে অংশবিশেষ উত্থাপন করায় এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা অতিশয় উক্তিও হয়েছে। এর ফলে শরিকদের কারও মনে যদি কোনো সংশয়, বিভ্রান্তি তৈরি হয়ে থাকে এবং এর জন্য কেউ ক্ষুব্ধ হলে, সে জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ১৪ দলে ছিলেন, আছেন। ১৪ দলকে তিনি ধারণ করেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সূত্র বলছে, দলের ভেতর মত ছিল কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দেওয়ার। কিন্তু রাশেদ খান মেনন জবাব দেওয়ার পক্ষে মত দেন। এরপর জবাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সূত্র জানায়, বক্তব্য না দেওয়ার পক্ষের যুক্তি ছিল যে শরিক দলের কাউকে লিখিত কারণ দর্শানোর বিষয়টি ১৪ দলের এখতিয়ারে নেই। বরং আলোচনার টেবিলেই এটির সমাধান সম্ভব ছিল। কিন্তু জোট ধরে রাখার স্বার্থে শেষ পর্যন্ত জবাব দেওয়ার পক্ষেই মত আসে।

১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদ খান মেননের জবাব পেয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই ১৪ দলের বৈঠক ডেকেছেন। এতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধিও থাকবেন। বৈঠক শেষে জোটের বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে রাশেদ খান মেনন ইতিবাচক জবাবই দিয়েছেন।