বৃষ্টি যেন পেঁয়াজচাষিদের কান্না হয়ে ঝরেছে

সপ্তাহখানেক আগে রোপণ করা পেঁয়াজের বীজ ডুবে গেছে বৃষ্টির পানিতে। নতুন করে আর উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই ভেসে ওঠা পেঁয়াজের বীজ সরিয়ে নিচ্ছেন এক কৃষক। সম্প্রতি সাঁথিয়ার করমজা গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
সপ্তাহখানেক আগে রোপণ করা পেঁয়াজের বীজ ডুবে গেছে বৃষ্টির পানিতে। নতুন করে আর উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই ভেসে ওঠা পেঁয়াজের বীজ সরিয়ে নিচ্ছেন এক কৃষক। সম্প্রতি সাঁথিয়ার করমজা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

সপ্তাহখানেক আগে এক বিঘা জমিতে মূলকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম। মৌসুমের শুরুতে বন্যার কারণে সময়মতো আবাদ করতে পারেননি। ভেবেছিলেন পানি নেমে যাওয়ায় এবার আর প্রাকৃতিক কোনো বাধা আসবে না। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় লাভসহ ক্ষতির টাকাও উঠে আসবে। কিন্তু শফিকুলের সে স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে অসময়ের বৃষ্টি।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে প্রায় গোড়ালিসমান পানি জমেছে শফিকুলের জমিতে। পচে গেছে রোপণ করা পেঁয়াজ। আবর্জনা হয়ে ভেসে উঠেছে পানিতে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শফিকুল বলেন, ‘এক হাজার টাকা মণের পেঁয়াজের বেছন (বীজ) এবার চার হাজার টাকায় কিন্যা জমিতে লাগাইছি। দুই মণ বেছন কিনতিই আট হাজার টাকা লাগিছে। চাষ, সার, কামলাসহ সব মিলায়া ১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হইছিল। টানা বৃষ্টিতে সব শ্যাষ হয়া গেল।’

শফিকুলের মতো সাঁথিয়ার অনেক কৃষকই বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হা-হুতাশ করছেন। বিশেষ করে যাঁরা আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন, তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া সরিষা, আখ ও শীতকালীন সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাঁথিয়া দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা। এবার সাঁথিয়ায় ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১৫ হেক্টরের মতো জমিতে আবাদ হয়েছিল। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মূলকাটা (আগাম) জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেন এখানকার কৃষকেরা। বন্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে আবাদ করতে না পারায় ২১ দিন পর গত সপ্তাহে কৃষকেরা পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেছেন। বীজ কিনতে হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি দামে। উপজেলার বাজারে এবার প্রতি মণ পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকায়।

করমজার মল্লিকপাড়ার কৃষক গুলজার হোসেন ও সিদ্দিক হোসেন বলেন, পেঁয়াজের আবাদে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো বৃষ্টি। চাষের সময় বৃষ্টি হওয়া মানেই জমির বীজ আংশিক বা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়া। আবার মাটি আর্দ্র থাকলেও পেঁয়াজের আবাদ শুরু করা যায় না। এই বৃষ্টিতে যেসব জমিতে আবাদের প্রস্তুতি চলছিল, তাও পিছিয়ে গেছে।

গত শনিবার উপজেলার বায়া, করমজা ও শহীদনগর গ্রামের বেশ কয়েকটি ফসলি জমি ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে জমিগুলো নিমজ্জিত। এসব জমির বেশির ভাগেই পেঁয়াজ ও শীতকালীন সবজির চাষ করা হয়েছিল। কিছু জমিতে সেচযন্ত্র আর বড় পাত্র দিয়ে পানি সরাতে দেখা গেল কৃষকদের।

করমজা গ্রামের রহমত আলী তাঁর আধা বিঘা জমি থেকে থালা দিয়ে পানি সেচে বাইরে ফেলছিলেন। তিনি বলেন, ‘জমিতে সরিষার আবাদ করিছি। সবেমাত্র চারা গজানো শুরু হইছে। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে জমি এক্কেরে শ্যাষ। দুই দিন ধইর‌্যা নিজ হাতে জমি সেইচ্যা পানি বাইর করতেছি। কোনো লাভ নেই জেনেও মনের সান্ত্বনার জন্য এ কাজ করা।’

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, বৃষ্টিতে ঠিক কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। মাঠ কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করছেন ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।