হেমন্তের বৃষ্টি তাদের সর্বনাশ করে গেল

পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করতে কয়েক হাজার ইট সারি করে শুকাতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাতের বৃষ্টি ইটকে মাটি করে দিয়ে গেছে। ফসলি জমিও ডুবে গেছে বৃষ্টির পানিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদ্য রোপণ করা শস্য।

রাজশাহীতে গত কয়েক দিনের অসময়ের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। বন্যার পানি নেমে গেছে আবার শীতকালও চলে এসেছে প্রায়। হেমন্তে টানা বৃষ্টি হবে—উত্তরাঞ্চলের মানুষ প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে পরিচিত না হলেও এবার তা–ই হয়েছে। নতুন করে চাষাবাদের কাজ শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত এই ক্ষতিতে কৃষকেরা যেন মুহ্যমান।

জেলার চারঘাট উপজেলার মুংলী গ্রামে গিয়ে দুটি ইটভাটার কয়েক হাজার ইট নষ্ট হওয়ার চিত্র দেখা গেল। অন্যদিকে দুর্গাপুরের পালশা গ্রামের চাষিরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও গতকাল রোববার পর্যন্ত সবজিখেতের পানি বের করতে পারেননি। 

চারঘাটের মুংলী গ্রামের একটি ইটভাটার মালিক সুজন আলী বলেন, বৃষ্টি আসতে পারে—এ জন্য তাঁরা পলিথিন দিয়ে শুকনো ইট ঢেকে রেখেছিলেন। কিন্তু রাতে এত বৃষ্টি আর বাতাস একসঙ্গে হয়েছে যে বাতাসে পলিথিন উড়ে গেছে। আর বৃষ্টিতে সব ইট গলে মাটি হয়েছে। সুজন বলছিলেন, এই অবস্থার জন্য তাঁরা একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। বৃষ্টি তাঁদের সর্বনাশ করে গেছে। 

 পবা উপজেলার মুরারীপুর গ্রামের চাষি বুলবুল হোসেন তাঁর ২৫ কাঠা জমিতে আগাম বাঁধাকপি চাষ করেছিলেন। সবে কপি উঠতে শুরু করেছিল। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টিতে সর্বনাশের শুরু। এরপর গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে খেতের কপিতে পচন ধরেছে। 

বুলবুল হোসেন বলেন, ভালো দাম পাওয়ার আশায় বাড়তি খরচ করে এই কপি চাষ করেছিলেন তিনি। শুধু কপি নয়, আরও ২৫ কাঠা জমিতে কলাই চাষও করা হয়েছিল। পানিতে পুরো জমি তলিয়ে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে তাঁর। 

এর আগে বন্যার কারণে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। পানিতে ডুবে যায় মাঠের পর মাঠের ফসল। বিশেষ করে শীতকালীন সবজির জমিগুলো ডুবে যাওয়ায় বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। 

এদিকে সবজির উৎপাদন কম হওয়ার এই সুযোগে নগরীর বাজারগুলোতেও সবজির দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। 

দুর্গাপুরের পালশা গ্রামের মুজিবুর রহমান চার বিঘা জমিতে বরবটি, মরিচ ও অন্যান্য সবজি চাষ করেছিলেন। একই গ্রামের কৃষক সাইদুলের এক বিঘা মরিচখেতে পানি জমে সব মরিচগাছ মরে গেছে। জমিগুলো থেকে পানি বের করার উপায় না থাকায় বিপদ যেন আরও বেড়েছে তাদের।

মুজিবুর রহমান বলছিলেন, এলাকার আনুলিয়া বিলে প্রায় ২৫ বিঘার মতো ফসলি জমি আছে। বৃষ্টি হলেই অতিরিক্ত পানিতে ফসল ডুবে যায়। কিন্তু পানি বের হওয়ার পথে পুকুর করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

মজিবুর রহমান আরও বলেন, পুকুরটি অপসারণ অথবা পানি বের হওয়ার জন্য বিকল্প পথ করতে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসীন মৃধা প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি নতুন এসেছেন। বিল থেকে পানি বের করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নেবেন তিনি।