চট্টগ্রামে বন্দীদের চিকিৎসা হবে এক কক্ষে

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকেন অসুস্থ বন্দীরা। তাঁদের পাহারায় থাকে কারারক্ষী ও পুলিশ। এতে অস্বস্তিতে থাকেন সাধারণ রোগীদের স্বজন। আগামী মাস থেকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বন্দীদের হাসপাতালের একটি কক্ষে (প্রিজন অ্যানেক্স) চিকিৎসা শুরু হবে। এতে বাড়তি কারারক্ষী ও পুলিশ লাগবে না। পাশাপাশি অস্বস্তি দূর হবে রোগীর স্বজনদের। কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে হাসপাতাল থেকে গত বৃহস্পতিবার চিঠি দেওয়া হয়। 

কারা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ সাতটি কারাগারে গুরুতর অসুস্থ বন্দীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাঁদের রাখা হয়। একজন বন্দীর পাহারায় দৈনিক ছয়জন কারারক্ষী লাগে। পাশাপাশি থাকে পুলিশ সদস্যও। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তি হওয়ায় মেঝেতেও অনেক রোগীকে থাকতে হয়। একজন বন্দীর পাহারায় কারারক্ষীসহ তিনজন থাকায় অস্বস্তিতে থাকেন সাধারণ রোগীর স্বজনেরা। 

রাউজানের নাসিমা আক্তার নামের এক নারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁর পাশে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুমন আচার্য নামের এক বন্দী। নাসিমার ছেলে মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ নারীর পাশে বন্দীকে পাহারায় ছিল কারারক্ষী ও পুলিশ। এ কারণে তাঁর মা অস্বস্তিতে ছিলেন। শঙ্কা কাটাতে চাকরি বাদ দিয়ে সারাক্ষণ মায়ের পাশে থাকতেন। নাসিমার মতো অস্বস্তিতে থাকা রোগী বিলকিস আক্তার, আফিফা খাতুনও জানালেন তাঁদের কথা।     

অন্য কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হলেও পাহারায় থাকেন চট্টগ্রাম কারাগারের কারারক্ষীরা। বন্দীর তুলনায় কারারক্ষীর সংখ্যা কম থাকলেও হাসপাতালে পাহারায় দৈনিক একজন বন্দীর পেছনে তিনজন কারারক্ষীকে রাখতে হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে ৮ হাজার ১০০ বন্দী রয়েছেন। দৈনিক গড়ে ১২ জন বন্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। সেই হিসাবে ১২ জন বন্দীর জন্য তিন পালায় ৩৬ জন কারারক্ষীকে পাহারায় রাখতে হয়। পাশাপাশি থাকেন একজন করে পুলিশ সদস্যও। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে অসুস্থ বন্দীরা চিকিৎসা নেওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে হিমশিম খেতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালের নিচতলায় পাঁচ বছর আগে বন্দীদের জন্য একটি ছোট কক্ষ দেওয়া হলেও সেখানে পর্যাপ্ত আলো–বাতাসের ব্যবস্থা নেই। পরিবেশ সুন্দর না হওয়ায় রোগীদের রাখা হয় না। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আটক সন্ত্রাসী থেকে শুরু থেকে বন্দীরা চিকিৎসা নেওয়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রাখা নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সাধারণ রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা পুলিশ, কারারক্ষী দেখে শঙ্কায় থাকেন। আলাদা কক্ষে সব বন্দীরা থাকলে রোগীদের অস্বস্তি থাকবে না। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. কামাল হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্দীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দের চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামী মাসে কক্ষটি চালু করা যেতে পারে। এতে ১২ জন কারারক্ষী দিয়ে পুরো কক্ষ পাহারা দেওয়া যাবে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও আরও জোরদার করা যাবে। এখন লাগে ৩৬ জন কারারক্ষী।