হাসপাতালে চাকরি পেলেন সেই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে, এসি ল্যান্ডকে বদলি

দিনাজপুরের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের গ্রামের বাড়ি যোগীবাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও স্বজনকে সমবেদনা জানান জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের গ্রামের বাড়ি যোগীবাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও স্বজনকে সমবেদনা জানান জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাহিত আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর ইসলাম গাড়িচালক পদে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি পেয়েছেন। এদিকে নুরকে চাকরিচ্যুত ও তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে দিনাজপুর সদর উপজেলার ভূমি কমিশনার (এসি ল্যান্ড) আরিফুল ইসলামকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার গ্রামের বাড়ি যোগীবাড়িতে কবর জিয়ারত শেষে স্বজনদের সমবেদনা জানান এবং চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।

পরে সাংবাদিকদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘আমি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সুতরাং স্বজনদের ব্যথা আমি বুঝি। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন একটি গাড়ি উপহার দিয়েছেন। নুর ইসলামকে সেই গাড়িতে চালক পদে চাকরির জন্য বলা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে নুর সেখানে যোগদান করতে পারবে।’

এ সময় হুইপের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম, প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বরূপ বকশী বাচ্চু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ।

উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন ছেলের চাকরিচ্যুতিতে প্রশাসনের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে অভিমান করে একটি চিঠি লিখে গেছেন। বিষয়টি তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। এসি ল্যান্ডকে বদলি করা হয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নুর ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা হুইপ সাহেবকে চিঠি লিখে গিয়েছিলেন। আমরা তার অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে তিনি এসে বাবার কবর জিয়ারত শেষে মায়ের সামনে বলে গেছেন হাসপাতালে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দিতে। যে বাসাতে থাকতাম সেখানেই থাকার জন্য বলা হয়েছে।’

এদিকে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও সব উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘জয়বাংলা রণধ্বনি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়িত করেছিলাম। সেই রণধ্বনি দিয়ে প্রশাসনে থাকা অযোগ্যদের বিতাড়িত করতে চাই।’

দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগীবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলে নুর হোসেন এসি ল্যান্ডের গাড়িতে ড্রাইভার পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করতেন। ছেলেকে চাকরিচ্যুত করা হলে প্রশাসনের ওপর অভিমান করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন না করতে লিখে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সেই চিঠি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর আগেই এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।