উপাচার্যের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত চান শিক্ষার্থীরা

সম্প্রতি উপাচার্যের ঘুষ গ্রহণের একটি অডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনার তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা, ২৮ অক্টোবর। ছবি: হাসান মাহমুদ
সম্প্রতি উপাচার্যের ঘুষ গ্রহণের একটি অডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনার তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা, ২৮ অক্টোবর। ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে উপাচার্যের ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে তদন্তসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দিনভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে তাঁরা আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অন্য তিনটি দাবি হচ্ছে, এ ঘটনায় তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং উপাচার্যকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হতে না পেরে মনিরুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে উপাচার্যের পথ আটকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। চাকরি না দেওয়ায় তিনি উপাচার্যের কাছে টাকা ফেরত চান। ওই দিন রাতে এ–সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি), নিয়োগ পরীক্ষাটি বাতিল ও উপাচার্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করায় তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর কয়েকজন জানান, ঘটনার তিন দিন পর সকালে ক্যাম্পাস খুলতেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হতে শুরু করেন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে একত্র হতে শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি তুলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। উপাচার্যও কার্যালয়ে আসতে পারেননি। পরে বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এসে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের সঙ্গে জড়িত। ফলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষার্থে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চান। অন্যদিকে ঘটনার পর প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে নিজেদের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছেন। নিজেদের দায় ঢাকতে অন্যায়ভাবে তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাসের বেশির ভাগ দিন ক্যাম্পাসে থাকেন না। তিনি রাজশাহী ও ঢাকায় থাকেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিকর পরিস্থিতি লেগেই আছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সার্বক্ষণিক উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে অবস্থানের দাবি তুলেছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার দফা দাবি না মানলে আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে চাকরিপ্রার্থী উপাচার্যকে হেনস্তা করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখল। এর মধ্যে অবশ্যই তাদের ব্যর্থতা লুকিয়ে আছে। ব্যর্থ এই প্রশাসনকে অবশ্যই দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রীতম কুমার দাস বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা কোনো লিখিত দাবি জানায়নি। লিখিত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হবে। অন্যদিকে শিক্ষকদের যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা জবাব দিলেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। এখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
উপাচার্য এম রোস্তম আলী বলেন, ‘শিক্ষকদের একটি পক্ষ অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। তারাই এসব করছে। আমি সৎ ও ন্যায়ের পথে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। কোনো অন্যায় করিনি।’