চুনোপুঁটিদের ধরে নিজেদের শুদ্ধ করতে চাচ্ছে সরকার: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার চুনোপুঁটিদের ধরে নিজেদের শুদ্ধ করতে চাইছে। আজ সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জেলা সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে এখন শুদ্ধি অভিযান চলছে। কীসের শুদ্ধি? নিজেদের শুদ্ধি। আত্মশুদ্ধি। খুব ভালো কথা। তাহলে স্বীকার করছেন, আপনারা শুদ্ধ নন। আপনারা কাদা-গ্লানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছেন। সে জন্য নিজেদের শুদ্ধ করতে চান।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘শুদ্ধ করছেন কাকে কাকে নিয়ে? চুনোপুঁটিদের ধরে নিজেদের শুদ্ধ করতে চাইছেন। যাদের ধরছেন তাঁরা কি আসল? আসলগুলো কোথায়?’

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে কৃষকেরা ধানের দাম পান না। কৃষকেরা সরকারি নির্দেশনা না পেয়ে একেকজন একেক ফসল আবাদ করছেন। এ কারণে দেশে ধানের চাষ কমে যাচ্ছে। যে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল, সেই মানুষেরা যদি পণ্যের দাম না পান, তাহলে দেশে উন্নয়ন হবে কীভাবে? আমরা চিৎকার করে বলছি, বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানাব। সিঙ্গাপুরে কোনো কৃষি নেই। ওখানে কোনো ফসল ফলে না। সবকিছু আমদানি করতে হয়। দেশের কৃষি ও কৃষককে শেষ করে সরকার দেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চাচ্ছে। সরকারি দলের লোকজনের কথায় বাংলাদেশে উন্নয়নের লহরি বইছে। যে দেশে কৃষক তাঁর পণ্যের দাম পান না, সেখানে কোথা থেকে উন্নয়ন আসে আমার মাথায় ঢোকে না।’

জিডিপির উন্নয়ন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি অর্থনীতির সামান্য একজন ছাত্র। আমি যেটুকু বুঝি—কৃষক যদি ভালো থাকে, তাঁর আয় যদি উদ্বৃত্ত থাকে, তাহলেই জিডিপির উন্নয়ন হয়। আজকে কৃত্রিমভাবে জিডিপির উন্নয়ন দেখানো উন্নয়নকে উন্নয়ন বলা যায় না। এ উন্নয়ন অত্যন্ত আত্মহননকারী উন্নয়ন। যে উন্নয়ন আমাকে ঋণগ্রস্ত করবে, যে উন্নয়ন আমাকে পরনির্ভরশীল করে দেবে, যে উন্নয়ন আমার ভবিষ্যৎকে রুদ্ধ করে দেবে; সে উন্নয়ন উন্নয়ন হতে পারে না।

দেশের গণতন্ত্র নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ছিল গণতন্ত্র। আমি একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাস করব; যেখানে সবার বলার অধিকার থাকবে, সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যেখানে সুশাসন, ন্যায়বিচার, কথা বলার অধিকার থাকবে। আজকে কী দেখছি? আমি কথাই বলতে পারছি না। আমার প্রতি সুবিচার করা হয় না। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। যে জামিন তাঁর প্রাপ্য, সবাই যে জামিন পেয়ে যান, সেই জামিন তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। আজকে তিনি তাঁর মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি এতই অসুস্থ যে নিজে খাবার তুলে খেতে পারেন না। তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূর করে দেওয়ার জন্য।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

সরকারের শুদ্ধি অভিযানের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আজকে সুন্দর সুন্দর কথা বলছে, তা শুনলে হাসি পায়। যারা জনগণের ভোটকে ভয় পায়, জনগণকে ভোট দিতে দেয় না; এখন তারা শুরু করেছে শুদ্ধি অভিযান। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্যাতিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছেলে বুয়েটে পড়তে গেছে। বাবা-মায়ের কত স্বপ্ন। সেই ছেলেকে শুধুমাত্র সত্য কথা বলার অপরাধে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। দেশে এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটছে। তার খবর আসে না। পত্রিকায় দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল কেন?’

এর আগে দুপুর ১২টায় শহরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তন চত্বরে ফিরে আসে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্যসচিব হাসান জাফির তুহিন। উদ্বোধনের পর জেলা কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. খুরশীদ আলম সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম অধিবেশন শেষে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। কাউন্সিল অধিবেশনে আনোয়ারুল হককে সভাপতি ও মো. খুরশীদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।