জান্নাতিকে বিয়েও দেবেন, বলেছিলেন গৃহকর্ত্রী রোকসানা

জান্নাতি। ছবি : সংগৃহীত
জান্নাতি। ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতি আকতার ছিল তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের তেলিহাটা গ্রামের ভ্যানচালক জানু মোল্লার ঘরে পিঠাপিঠি তিন মেয়ের জন্ম। তাই সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম সেখানে মেয়েরা বড় হলে কীভাবে বিয়ে দেবেন সেই চিন্তাও ভর করেছিল দরিদ্র এই বাবা-মায়ের মনে।

দিন যেভাবেই চলুক বড় মেয়ে জান্নাতি এবং অ্যামিলিকে জানু মোল্লা ভর্তি করেছিলেন গ্রামে ব্র্যাক পরিচালিত স্কুলে। বছর চারেক আগে একদিন রোকসানা পারভিন নামে এক নারী আট বছরের জান্নাতিকে তাঁর বাসায় কাজে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই গ্রামে রোকসানার নানা বাড়ি। সেই সূত্রে রোকসানার সঙ্গে পরিচয় ছিল জানু মোল্লার। রোকসানা জান্নাতিকে শুধু বেতন নয়, বিয়েও দিয়ে দেবেন বলে তার (জান্নাতি) বাবা-মাকে প্রতিশ্রুতি দেন। এতে রাজি হয়ে তাঁর হাতে মেয়েকে তুলে দেন জানু মোল্লা।

স্বামী সাঈদ আহমেদের চাকরি সূত্রে রোকসানা তখন বগুড়া শহরে ছিলেন। এরপর সাঈদের পরিবার ঢাকায় চলে এলে জান্নাতীও তাঁদের সঙ্গে ঢাকায় আসে। সাঈদ বর্তমানে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভোরে জান্নাতির বাবাকে মেয়ে অসুস্থ বলে ঢাকায় ডেকে আনা হয়। ঢাকায় এসে দেখেন মেয়ে মারা গেছেন। তিনি মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দেখতে পান। এ ঘটনায় তিনি মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।

মানববন্ধনে জান্নাতির মায়ের আহাজারি। গাবতলী উপজেলা পরিষদ চত্বর, বগুড়া, ২৮ অক্টোবর । ছবি: সোয়েল রানা
মানববন্ধনে জান্নাতির মায়ের আহাজারি। গাবতলী উপজেলা পরিষদ চত্বর, বগুড়া, ২৮ অক্টোবর । ছবি: সোয়েল রানা

রোকসানা পারভিনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এখন রোকসানার পলাতক স্বামী সাঈদকে গ্রেপ্তার এবং এই দম্পতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ সোমবার বগুড়ার গাবতলীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। মানববন্ধনে জান্নাতির বাবা-মাও উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন শেষে জানু মন্ডল বলেন, ‘হামাকেরে অভাবের সংসার। সহায় সম্বল বলতে কিছুই নাই । পরপর তিনডা মেয়ে। বিয়্যা দিবার টেকা পামু ক্যামনে সেডা লিয়ে চিন্তাত আচনু। এরমধ্যে রোকসানা একদিন আসে কয়, মেয়েডাক দাও, হামার বাসাত থাক। বড় হলে বিয়া দিমু। মনে করনু; বিয়ের চিন্তাডা আর করতে হবিনা। কিন্ত বিয়া দিবার কথা কয্যা হামার মেয়েডাক লিয়্যা যায়্যা রোকসানা এভাবে মারা ফালাবি সেডা আগে জানলে কোনমতেই দর্জ্জাল মেয়েডার হাতত হামার জান্নাতিক তুলে দিতাম না।’

রোকসানা ও সাঈদ দম্পতির শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। গাবতলী উপজেলা পরিষদ চত্বর,বগুড়া, ২৮ অক্টোবর । ছবি: সোয়েল রানা
রোকসানা ও সাঈদ দম্পতির শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। গাবতলী উপজেলা পরিষদ চত্বর,বগুড়া, ২৮ অক্টোবর । ছবি: সোয়েল রানা

মা শামসুন নাহার কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বাস করে রোকসানার হাতে আট বছরের মেয়েটাকে তুলে দিয়েছিলাম। কাওকে না বলেই বগুড়া থেকে জান্নাতিকে ঢাকার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে স্বামী-স্ত্রী মিলে দিনের পর দিন নির্মম নির্যাতন করেছে মেয়েটিকে। একটা অসহায় শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

জান্নাতির মামা আতিকুর রহমান বলেন, হত্যাকান্ডের পর থেকেই রোখসানার পরিবারের পক্ষ থেকে অর্থের বিনিময়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্ত আমরা রাজি হইনি।