হাসিনা মহিউদ্দিনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, মেয়রকে বেঁধে দেওয়া হলো সময়

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরের আয়োজিত আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয় যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছবি: জুয়েল শীল
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরের আয়োজিত আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয় যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের কাছে ক্ষমা চাইতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরের আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই সময়সীমা বেঁধে দেয় মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা।

আজকের বিক্ষোভে কার্যত যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম। তবে কোনো সংগঠনের নাম লেখা ছিল না।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিপুল জনসমাগম হয়। নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ও ভক্তরা যোগ দেন। কর্মসূচির কারণে গতকাল প্রেসক্লাবের সড়কের একদিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়।

গত রোববার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ তিনজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।  বাকি দুজন হলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং নগর আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন তিন নেতাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। কারণ, তাঁদের মঞ্চে ওঠার অনুমোদন ছিল না বলে মেয়র জানান।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা আজকের বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করব। আশা করি, মেয়র নাছির উদ্দীন ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সমাবেশে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুরের অভিযোগ, গতকালের প্রতিনিধি সভায় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সার, আখতারুজ্জামান চৌধুরী এবং এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের স্মরণ করা হয়নি। অথচ তাঁদের শ্রম ও রক্তেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ আজ প্রতিষ্ঠিত।

হাসান মনসুর আরও বলেন, হাসিনা মহিউদ্দিন একজন নেত্রী। সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ সভাপতির স্ত্রী এবং একজন মন্ত্রীর মা। তাঁকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে অপমান করা হয়েছে। এই অপমান নারী জাতির। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেয়র নাছির উদ্দীনকে ক্ষমা চাইতে হবে।

নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন বলেন, অনেক পাতি নেতাকে মঞ্চে দেখেছি। তাঁরা ফেসবুকে ছবিও দিয়েছেন। আর হাসিনা মহিউদ্দিনকে নেমে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবার আমাদের আবেগের আশ্রয়স্থল। এই আবেগে চপেটাঘাত করা হয়েছে। এটা বরদাশত করা যাবে না।

নগর শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রতিনিধি সভার মঞ্চে হাসিনা মহিউদ্দিনের ওঠার অনুমতি ছিল না। কিন্তু তালিকার বাইরে অন্য যারা মঞ্চে ওঠেন তাঁরা কারা? অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও একজনের অনুসারীরা উঠবেন। আর হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে যেতে বাধ্য করা প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, হাসিনা মহিউদ্দিনকে অপমান করে তাঁরা কী প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন তা নগরবাসী জানতে চায়। একজন মেয়র শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করে নারী জাতিকে অপমান করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নুরুল আজিম বলেন, আজকের সমাবেশ শুধু অপমানের প্রতিবাদে নয়, এ সমাবেশ দানব মুক্তির সমাবেশ। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অপশক্তির অবসানের সমাবেশ। সুষ্ঠু, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার সমাবেশ।

নুরুল আজিম আরও বলেন, চট্টগ্রামে খুনের রাজনীতি চলছে। সুদীপ্ত খুন হয়েছে, দিয়াজ খুন হয়েছে, নাসিম আহমেদ সোহেল খুন হয়েছে। কোনো খুনের বিচার হয়নি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এসব খুনিদের গডফাদার একজন। গডফাদার নির্মূলের আন্দোলন আমরা শুরু করব।