মানবপাচার মামলা: আট সপ্তাহের আগাম জামিন পেল শিশুটি

টিকাদান কার্ডে কক্সবাজারের শিশুটির জন্মতারিখ ২০০৭ সালের ১০ আগস্ট। আর মানবপাচারের অভিযোগে গেল বছর করা মামলায় তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২২ বছর। এই মামলায় আগাম জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে দারস্থ হয় শিশুটি; সে আসে মায়ের হাত ধরে।

জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আট সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।

শুনানিকালে আদালত বলেন, দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারী মাইনর। যে এখনো পরিপূর্ণ মানবই হতে পারল না, সে কীভাবে মানবপাচার করে?

আদালতে জামিন আবেদনকারী শিশুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জামান আকতার বুলবুল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

পরে জামান আকতার বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় ঘটনার সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৪ সালের ২০ জুন, সে হিসেবে তখন শিশুটির বয়স প্রায় সাত বছর। আর মামলাটি করেছে ২০১৮ সালে। এখন শিশুটির বয়স ১২ বছর। শিশুটির বাবা নেই। বাড়ি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিহিংসার বশে শিশুটিকে মামলায় জড়ানো হয়েছে-এসব যুক্তিতে জামিন আবেদনটি করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জামিন আবেদনকারী ছেলেটি শিশু। দেখতে তার বয়স সর্বোচ্চ ১২ / ১৩ বছর হবে। হাইকোর্ট তাকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন। এই সময় শেষ হওয়ার পর ছেলেটি সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, রামুর হাজি পাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (৪১) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গেল বছরের নভেম্বরে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি পিটিশন মামলা করেন। মামলায় কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল এলাকার ওই শিশুটিসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় ঘটনার তারিখ ও সময় হিসেবে ২০১৪ সালের ২০ জুন রাত আটটা এবং ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর উল্লেখ রয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিনা খরচে মালয়েশিয়া ভালো বেতনে কাজ দেবে বলে ২০১৪ সালের ২১ জুন সাগরে ছোট নৌকা দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। জাহাজটি কয়েক দিন চলার পর থাইল্যান্ডের উপকূলীয় পাহাড়ের জঙ্গলে নামিয়ে দেয় বাদীকে। সেখানে দালাল চক্রের লোকজন মারধর করে মুক্তিপণ দাবি করে। মোবাইল ফোনে স্বজনদের কাছ থেকে শিশুটিসহ অপর দুই আসামিকে দুই লাখ টাকা দেন। পরে আরও এক লাখ টাকা নেওয়ার পর মালয়েশিয়া পৌঁছায় নুরুল ইসলাম। ২০১৭ সালের জুন মাসে মালয়েশিয়া অভিযানকালে আটক হন তিনি। জেল খাটার পর গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরত আসেন তিনি। আর মামলাটি করেন একই বছরের ২৯ নভেম্বর।