পর্যটকদের গন্তব্য সেন্ট মার্টিন

প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে সেন্ট মার্টিন সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।  প্রথম আলো
প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে সেন্ট মার্টিন সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। প্রথম আলো

পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে এক মাস আগে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর মৌসুমের শুরুতে ঘটা করে বিশ্ব পর্যটন দিবসও পালিত হয়। হোটেল মালিকদের আশা ছিল মৌসুমে দলে দলে আসবেন পর্যটকেরা। অথচ তেমনটি ঘটেনি। কারণ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। মূলত সেন্ট মার্টিন দেখতেই অধিকাংশ পর্যটক কক্সবাজার আসেন। আগামী শুক্রবার ১ নভেম্বর থেকে আবারও পাঁচটি পর্যটকবাহী জাহাজ টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচল শুরু করবে। প্রবাল দ্বীপটিতে এখন রাত্রিযাপনেও নেই কোনো বাধা। এ কারণে শুক্রবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল মালিকেরা।

হোটেল–মোটেল মালিকেরা বলছেন, সেন্ট মার্টিন বেড়াতে ইচ্ছুক পর্যটকেরা প্রথমে কক্সবাজারে আসেন। সেখান থেকেই যান সেন্ট মার্টিনে। এ জন্য সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল চালু থাকলে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে।

কক্সবাজার কটেজ গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমদ বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে দুই লাখের বেশি পর্যটক এসেছিলেন। তখন ৭০ শতাংশ পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেন। এখন পুরো অক্টোবর মাসে ২০ হাজার পর্যটক আসেননি। কারণ সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ। সেন্ট মার্টিনের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটনব্যবসা। লাখো পর্যটককে বরণ করতে প্রস্তুত আছে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল, কটেজ ও গেস্টহাউস।  

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০ অক্টোবর থেকে সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়ার প্রভাবের কারণে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হবে। ইতিমধ্যে পাঁচটি জাহাজ টেকনাফের নাফ নদীর কেরনতলীর ঘাটে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাহাজগুলো হচ্ছে, কেয়ারি সিন্দাবাদ, এমভি ফারহান ক্রুজ, এমভি দোয়েল পাখি, এমভি পারিজাত ও কেয়ারি ডাইন। 

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে পাঁচটি জাহাজের মালিক আবেদন করেছেন। কিন্তু আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো না থাকায় জাহাজগুলোকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন সাপেক্ষে নভেম্বরের প্রথম দিকে জাহাজগুলো চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। 

গত মৌসুমে অক্টোবর থেকেই এ নৌপথে চলাচল করেছিল নয়টি জাহাজ। এরপর মার্চ পর্যন্ত চলে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ। এপ্রিল থেকে সমুদ্র উত্তাল হলে জাহাজ চলাচল কয়েক মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়।

রাত্রিযাপনে বাধা নেই

২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে  সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মতে দুটি জাহাজে ৫০০ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন এবং তাঁদের যাওয়ার আগে অনলাইনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু নানা কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপনে সমস্যা নেই।

এ প্রসঙ্গে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী বলেন, নানা কারণে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত চলতি বছর কার্যকর করা যাচ্ছে না। সেন্ট মার্টিন হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, হঠাৎ করে পর্যটক বন্ধ করা হলে স্থানীয়দের ক্ষতি হবে। সেখানে রাত্রিযাপন করতে না দিলে পর্যটকেরা উৎসাহ হারাবেন। তখন কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।  

৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রয়েছে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল এবং ১১০ প্রজাতির পাখি ও ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।