ব্যবহারে আগ্রহ নেই রোগীদের

অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি এখন অকেজো ও অযত্নে পড়ে আছে।   প্রথম আলো
অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি এখন অকেজো ও অযত্নে পড়ে আছে। প্রথম আলো

২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর। হাওরের প্রসূতিসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের চাবি তুলে দেন। চাবি গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান। এই এক বছরে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির সাফল্য বলতে মাত্র একজন রোগী পরিবহন করা। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো ও অযত্নে থানাঘাটে পড়ে আছে।

ইসহাক বাবু অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন হলো, মূলত অ্যাম্বুলেন্সটি সেবাপ্রত্যাশীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ এটি এতই ধীরগতির যে গন্তব্যে যেতে লঞ্চের দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। এ কারণে স্থানীয় লোকজন বিনা খরচেও সেবা নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

ইসহাক বাবু জানান, প্রতিকার পেতে তিনি এরই মধ্যে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা তিনটি। এগুলো হলো অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে তিন উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে জরুরি প্রসূতিসেবা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মাতৃমৃত্যুহার রোধ করা যাচ্ছে না। এ রকম বাস্তবতায় ও স্থানীয় লোকজনের চাহিদার কারণে এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে যে ১০টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়, তার মধ্যে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একটি পাঠানো হয়।

অ্যাম্বুলেন্সটিতে একটি শয্যা, জেনারেটর, নেবুলাইজার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার সুবিধা যুক্ত করা আছে। এটি আসার পর চালানোর জন্য মাস্টাররোলে একজন চালকও নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম দিন থেকেই নানা জটিলতার মধ্যে পড়ে। প্রথম দিন পরীক্ষামূলকভাবে চালাতে গিয়ে দেখা যায় স্টিয়ারিং কাজ করে না। ডানে নিতে চাইলে বাঁয়ে চলে যায়, বাঁয়ে নিতে চাইলে যায় ডানে। গতি অতি ধীর। তখন জরুরি ভিত্তিতে কারিগরি বিভাগ থেকে লোক এসে স্টিয়ারিং মেরামত করে যায়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সচল হওয়ার পর কিছুদিন পর একজন প্রসূতি নারীকে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন অ্যাম্বুলেন্সটি একই জেলার কুলিয়ারচর পৌঁছাতে সময় লাগে পৌনে চার ঘণ্টা। অথচ লঞ্চে আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। আর স্পিডবোটে সময় লাগে ৪০ মিনিট। এই তথ্য জানার পর স্থানীয় লোকজন অ্যাম্বুলেন্সটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

অ্যাম্বুলেন্সটি যখন পাঠানো হয়, তখন হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন বুলবুল আহমেদ। বর্তমানে তিনি ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। বুলবুল আহমেদ বলেন, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানো হয়েছে। এখন এর গতি যদি কচ্ছপের মতো হয়, তাহলে তো হিতে বিপরীত হবেই। তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটির গতি এতই ধীর যেকোনো মানুষ বিরক্ত হতে বাধ্য।

এ ক্ষেত্রে বুলবুল আহমেদের পরামর্শ হলো, হাওরে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে স্পিডবোট প্রয়োজন। তাহলে ৪০ মিনিটে রোগী নিয়ে কুলিয়ারচর পৌঁছানো যাবে। তারপর ঢাকা কিংবা জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হবে।

সম্প্রতি খবর নিয়ে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি থানাঘাটে রাখা আছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সটি অর্ধেক উল্টে আছে। এরই মধ্যে ব্যাটারি চুরি হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি হাওর সফরে আসেন। তখন অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাটারি সংযোজন হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি পাহারার জন্য নৈশপ্রহরী রাখার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

জেলার সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, কারিগরি সমস্যা তো আছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানির ওঠানামা। বর্ষা বিদায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি নামছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটি রাখার স্থানও পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এ নিয়ে মহাবিপদ।

যোগাযোগ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিএম সোহদেব রাজবংশী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা আছে। গতি এত কম হওয়ার কথা নয়। লঞ্চের আগেই পৌঁছার কথা। কারণ, এই অ্যাম্বুলেন্সটির গতিক্ষমতা হলো ১২ নটিকেল মাইল।’

বিষয়টি দেখছেন বলে জানান সোহদেব রাজবংশী।