তাহলে ভাতা তুললেন কে?

নান্দাইল পৌরসভার আচারগাঁও মহল্লার মোছা. রাশিদা আক্তারকে মুঠোফোনে মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ে ডেকে নেন পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতানা পারভীন (৫০)। অভিযোগ উঠেছে, তিনি রাশিদার স্বাক্ষর নিয়ে মহিলাবিষয়ক কার্যালয় থেকে ‘কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল’ কর্মসূচির ভাতা উত্তোলনের একটি পাস বই উঠিয়ে নিয়েছেন। এই পাসবই হতদরিদ্র রাশিদার। অথচ তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি গত দুই বছর তাঁর পাস বই থেকে ভাতা তোলা হলেও তা তিনি পাননি।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন রাশিদা। ওই সাংবাদিক ফোনে সুলতানা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ওই নেত্রী মুঠোফোনে রাশিদাকে ডেকে নিয়ে পাস বইটি তাঁর হাতে তুলে দেন। এসব ঘটনা গত রোববারের।

গতকাল সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাশিদা আক্তারের নামে অর্থ উত্তোলনের পাস বই বরাদ্দ দেয়। কিন্তু রাশিদা কখনোই পাস বই হাতে পাননি। এমনকি তিনি জানতেও পারেননি যে তাঁর নাম কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচির তালিকায় উঠেছে। অথচ পাস বইটি ব্যবহার করে গত দুই বছরের ভাতা বাবদ ১২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে পাস বইয়ে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে প্রকৃত রাশিদার স্বাক্ষরের মিল নেই। বইটিতে ভাতা উত্তোলনের তারিখ ও বিতরণকারী ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকলেও ব্যাংকের সিলমোহর নেই।

মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আচারগাঁও মহল্লার ভাতার অর্থ সোনালী ব্যাংক নান্দাইল শাখা থেকে বিতরণ করা হয়ে থাকে। গতকাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক দিলোয়ার হোসেন বলেন, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল প্রকল্পের মেয়াদ সরকার এক বছর বাড়িয়েছে। এক বছরের টাকা আগের মতো পাস বই দিয়ে উত্তোলন করা যাবে না। ব্যাংক হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করতে হবে। তবে রাশিদার স্বাক্ষরে ভাতার টাকা উত্তোলন কে করেছেন, তা তিনি বলতে পারেননি। যিনি অর্থ বিতরণের দায়িত্ব ছিলেন, তিনি অবসরে চলে গেছেন।

হতদরিদ্র রাশিদা বলেন, তিনি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আউটসোর্সিংয়ের কর্মী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন। কর্মস্থল থেকে যে বেতন পান, তা দিয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে সন্তানদের খাওয়াপরা করাতে পারতেন না। ২০১৬ সালের আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী সুলতানা পারভীনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সুলতানা তাঁর কাছ থেকে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি নেন। এরপর যতবার সুলতানার সঙ্গে দেখা হয়েছে, ততবারই রাশিদা কার্ডের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই কার্ড এখনো হয়নি বলে তাঁকে জানিয়েছেন সুলতানা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে মহিলাবিষয়ক কার্যালয় পাস বই জমা নেয়। সম্প্রতি ওই প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে কার্ডে লাগানো ছবি দেখে পাস বই ফেরত দেওয়া হচ্ছিল। তখনই রাশিদার প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই গত রোববার আওয়ামী লীগ নেত্রী সুলতানা মুঠোফোনে রাশিদাকে মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান। কার্যালয়ের খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার পরই সুলতানা কার্ডটি রাশিদার হাত থেকে কেড়ে নেন বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চণ্ডীপাশা মহল্লায় ভাড়া বাসায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী সুলতানা পারভীনকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাশিদা নামের কাউকে চেনেন না বলে দাবি করেন। তাহলে একজন অচেনা নারীকে ফোন করে মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ে ডেকে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনাটি গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুর রহিম সুজনের নজরে আনলে তিনি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাশিদা রহমানকে নির্দেশ দেন।