সেপট্রিয়াক্সন ইনজেকশনটি ধীরে ধীরে দিতে হবে

সেপট্রিয়াক্সন ইনজেকশন জীবন রক্ষা করে। তবে শরীরে এই ইনজেকশন ঠিকভাবে প্রয়োগ না করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, ইনজেকশনটি কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে ধীরে ধীরে শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। একাধিক হাসপাতাল ও ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে সেপট্রিয়াক্সন ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর অধিদপ্তরের ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ কমিটি ওষুধ প্রয়োগের সময় নিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হলে এই ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।

ওষুধবিজ্ঞানীরা বলছেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কোন রোগীর কোন ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয় না। আবার ভুলভাবে প্রয়োগের ফলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ওষুধের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানার যে উদ্যোগ অধিদপ্তর নিয়েছে, তাতে নিরাপদ ওষুধ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে কমিটি ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৯৮৯টি অভিযোগ পেয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

ত্রুটিপূর্ণ ওষুধ প্রয়োগের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছরের ১১ মে রাজশাহী মেডিকেলের চারটি শিশু ওয়ার্ডে সেপট্রিয়াক্সন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও রেনিটিডিন-জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর একটি ওয়ার্ডের শিশুদের মধ্যে জ্বর, ঠান্ডার সমস্যা দেখা দেয়। রাজশাহীর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মির্জা মো. আনোয়ারুল বাসেদ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠান ঢাকা কার্যালয়ে ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ কমিটির কাছে।

পর্যবেক্ষণ কমিটির দুজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেছেন, একটি ওয়ার্ডের নার্স ঠিকভাবে ইনজেকশন প্রয়োগ না করার কারণে পাঁচটি শিশুর সমস্যা দেখা দেয়। এই ইনজেকশন আস্তে আস্তে প্রয়োগ করার কথা। কিন্তু প্রয়োগ করা হয়েছিল দ্রুত।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে একটি প্রকাশনা বের করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর সর্বশেষ সংখ্যাটি বের হয় এ বছরের জানুয়ারিতে। তাতে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ভুল প্রয়োগে মৃত্যুর ঘটনারও উল্লেখ আছে। সেখানে সেপট্রিয়াক্সন ইনজেকশনের কথা আছে।

>

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ২ হাজার ৯৮৯টি অভিযোগ এসেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, সেপট্রিয়াক্সন অ্যান্টিবায়োটিক-জাতীয় ওষুধ। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। নবজাতক থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষের শরীরে এটি ব্যবহার করা যায়। দেশের বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে এটি উৎপাদন করে। অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠিত হয় ২০১৩ সালে। এর সদস্যসংখ্যা ১৭। এই কমিটি কারিগরি সহায়তা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির কাছ থেকে। দেশের ৫০টি শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি ও ৫০টি হাসপাতাল থেকে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য বা অভিযোগ সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ কমিটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে প্রতি মাসে কয়েক হাজার অভিযোগ আসার কথা। অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে রোগীরা সচেতন নয়। অন্যদিকে চিকিৎসকেরাও কাজটি করেন না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করে তোলার মূল দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের।

কাজটি কীভাবে হয়

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা ওষুধ কোম্পানি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ কমিটিতে পাঠায়। তথ্য বা অভিযোগ যাচাই করে কমিটির অধীন কারিগরি কমিটি।

কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয় ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ কমিটি। প্রয়োজনে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেওয়া হয়। ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক নায়ার সুলতানা বলেন, সেপট্রিয়াক্সনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে, এই ইনজেকশন পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় নিয়ে শরীরে প্রয়োগ করতে হবে, এমন কথা মোড়কে লিখতে হবে।

অধিদপ্তরের কাগজপত্রে দেখা যায়, আরও বেশ কিছু ওষুধ সম্পর্কে অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে। নায়ার সুলতানা বলেন, চিকিৎসক এবং ওষুধের দোকানিদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে অধিদপ্তর। সাধারণ মানুষও www.dgda.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে ফরম নিয়ে বা সরাসরি অধিদপ্তরে এসে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারেন।