যুবলীগের আনিসের বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক

আনিস । ফাইল ছবি
আনিস । ফাইল ছবি

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় আনিসের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সুমি রহমানের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংস্থার উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান দুদকের ঢাকা–১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অবৈধ যেসব সম্পদ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে, তার ওপর ভিত্তি করে মামলা হয়েছে। তবে দুদকের কাছে তথ্য আছে, অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে আনিসুর রহমান দেশের বিভিন্ন স্থানে ও ঢাকার শান্তিনগরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ে ১২টি ফ্ল্যাট, জিগাতলায় একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জে হাঁস-মুরগির খামার, হ্যাচারিসহ শত বিঘা জমি, নামে-বেনামে একাধিক প্লট, বাড়ি ও ফ্ল্যাট, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে ২০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। মামলার তদন্তের সময় এসব সম্পদের বিষয়ে তথ্য–প্রমাণ সংগ্রহ করে তা আমলে নেওয়া হবে।

কাজী আনিসুর রহমান যুবলীগের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। আনিস কমিটি–বাণিজ্যসহ নানাভাবে অর্থ আয় করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমানের বিদেশযাত্রায় ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, কাজী আনিসের নিজ নামে–বেনামে অর্জিত ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। এর মধ্যে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টারে একটি ফ্ল্যাট, আর কে মিশন রোডের আমিন ভবনে ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, স্বামীবাগ রোডে ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডির ১০/এ সড়কে ফ্ল্যাট, শুক্রাবাদে ৭ তলা বাড়ি (প্রতি তলায় ৭৫০ বর্গফুট), ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে ১৪০০ বর্গফুট ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রসুলপুরে ২৪ ডেসিম্যাল জমি, গোবিন্দপুরে ৮০ শতাংশ জমিতে পেট্রোল পাম্প, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৪ শতাংশ নাল জমি পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া আরফিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কোম্পানির শেয়ার ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মা ফিলিং স্টেশনের শেয়ার ৩৬ লাখ টাকা, প্রাইজবন্ড ৩ লাখ টাকা, গাড়ির দাম ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ মোট ১ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক বলছে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া রেকর্ডপত্র অনুসারে ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে এফডিআরসহ বিভিন্নভাবে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে আনিসুর রহমানের ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাঁর আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই এবং এসবের সপক্ষে কোনো বৈধ উৎস নেই।

আনিসুর রহমানের স্ত্রী সুমি রহমানের নামে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকার স্থাবর ও ৫৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।