সাবেক স্ত্রী ও মেয়েকে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় মা ও মেয়েকে অ্যাসিডে ঝলসে দেওয়ার মামলায় ওই নারীর সাবেক স্বামী শাহাজাহান আলী মোড়লকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগে এছাক করিম নামের একজনকেও পুলিশ নড়াইল জেলার পঙ্কাবিলা গ্রাম থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কার্যালয় মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান।

গত ২১ অক্টোবর রাত পৌনে নয়টার দিকে ফাতেমা সুলতানা (২৯) ও তাঁর দুই বছরের মেয়ে জাফিয়া মেহজাবিনকে অ্যাসিড ঝলসে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে আশাশুনি উপজেলার চাপড়া গ্রামের ফাতেমা সুলতানার সঙ্গে নড়াইল জেলার পঙ্কাবিলা গ্রামের শাহাজাহান আলী মোড়লের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ফাতেমাকে মাদকাসক্ত স্বামী শাহাজাহান শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১৮ সালে বাবার বাড়ি ফিরে আসেন ফাতেমা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে বাবার বাড়ির পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গত ২১ অক্টোবর রাত পৌনে নয়টার দিকে শাহাজাহান অ্যাসিড ফাতেমার ওপর অ্যাসিড ছুড়ে। এতে তাঁর মুখ, চোখ ও বুক গুরুতর ঝলসে যায়। একই সঙ্গে তার দুই বছরের মেয়ে জাফিয়া মেহজাবিনেরও শরীরের বিভিন্ন অংশও ঝলসে যায়। ঘটনার পরপরই রাত ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের। পরের দিন ফাতেমার বাবা একরামুল কাদির বাদী হয়ে শাহাজাহান আলী মোড়ল ও তার মা সুফিয়া খাতুনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫-৬ জনের নামে আশাশুনি থানায় মামলা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ২৩ অক্টোবর ঢাকার মীর-১৪ নম্বরে অ্যাসিড সার্ভাইভরস ফাউন্ডেশনে তাকে ভর্তি করা হয়।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর থেকে শাহাজাহান আলী মোড়ল ও তার মাকে গ্রেপ্তারের জন্য পঙ্কাবিলা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। গতকাল রাতে ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় গেন্ডারিয়া থাকার মনির হোসেন লেন থেকে শাহাজাহান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে অ্যাসিড ছোড়ার কথা স্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনের পর শাহাজাহানকে সাংবাদিকের সামনে আনা হয়। দেখা যায় তাঁর ঘাড়ে পোড়া ক্ষত। ধারণা করা হয় অ্যাসিড ছুড়তে গিয়ে তার শরীরেও লেগেছিল।

চিকিৎসাধীন ফাতেমা সুলতানার সঙ্গে বিকেল চারটার দিকে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি জানান, বাম চোখে দেখতে পাচ্ছেন না তেমন। মুখ ও গলা ঝলসে গর্ত হয়ে গেছে। তবে জাফিয়া ভালো আছে।

ঢাকার মীর-১৪ নম্বরে অ্যাসিড সার্ভাইভরস ফাউন্ডেশনে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাহমিন ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আগের চেয়ে ভালো আছে ফাতেমা সুলতানা। আরও ৭-৮দিন না গেলে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। তবে তাঁর দগ্ধ স্থানগুলো গর্ত হয়ে গেছে।